সুখী হওয়ার চেষ্টাই সংগ্রাম
মাল্টি ন্যাশনালে ভালো একটা চাকরি পাইলে, মাসে মাসে ৬০ হাজার করে বেতন দিলে, বছরে ৭ লক্ষ বিশ হাজার টাকা। মনে মনে পুলকিত হইতে হইতে ভাবলেন যে, ধনী হয়ে যাবেন। না, এই ধারণাটা ভুল। দুই/তিন মাস যাইতে না যাইতেই দেখবেন বেকার থাকা অবস্থায় যে পরিমাণ অর্থ কষ্টে ছিলেন মাসের শেষ ১০ দিন মোটামুটি একই পরিমাণ অর্থকষ্টে চলে। বছরের অর্ধেক পার হইলে ভাববেন নেক্সট বছরে স্যালারী বাড়লে, বোনাস পাইলে এই অবস্থা আর থাকবে না। এইটাও ভুল। এক মাস না যেতেই দেখবেন যেই লাউ সেই কদু।
একটা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির ভিত্তিই হলো- স্ট্রাগল আর সেক্রিফাইস। যেখানে বাবা হচ্ছে স্ট্রাগলের কিং আর মা হচ্ছে সেক্রিফাইসের কুইন। মায়ের বিয়ের দিন থেকেই শুরু হয় সেক্রিফাইসের শোভাযাত্রা। নিজের চাওয়া পাওয়াকে আলমারিতে লুকিয়ে রেখেই শুরু করে দেয় ফ্যামিলি গড়ায় অবিরাম সেক্রিফাইস।
পাশের বাড়ির ভাবীর ছেলের চাইতে বড় কিছু হবার প্রেসার কুকারে দুই দিনেই আপনার সন্তানকে সিদ্ধ করে ফেলবেন না। জিপিএ তিনের নিচে থাকলেই যে পিএইচডি করতে পারবে বা এইচএসসি ফেল করলেই যে কোম্পানি খুলে বসতে পারবে, তা কিন্তু না। আবার ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাইলে, ক্লাস ফাইভে রোল নং এক হইলেই যে সফল হবে, তাও কিন্তু না। তবে সে ই সফল হবে যে- নিত্যদিনের সংগ্রামের সামনে বুক চেতিয়ে দাঁড়ানোর সাহস দেখাতে পারে। রাস্তা কঠিন আর অন্ধকার জেনেও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। বার বার আছাড় খেয়ে হাত পা ভেঙ্গে ফেলার পরেও আবারো হাটার ইচ্ছা করে।
মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির একটাই উদ্দেশ্য- খরচ কমিয়ে টাকা সেইভ করা। অন্যদিকে আপার ক্লাস জাস্ট উল্টা। এরা সেইভিংয়ে, খরচ কমানোতে ফোকাস না করে ইনকাম বাড়ানোতে ফোকাস করে। তবে এইসব ক্লাসের ডিফারেন্স টাকা দিয়ে তৈরি হয় না। বরং টাকাটা তাদের চিন্তা-ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, চেষ্টা-সাধনা করার অভ্যাসেরই প্রতিফলন মাত্র। যে অল্প কয়দিন চেষ্টা করে একটা কিছু পেয়ে সেইফ জোনে খেলার অভ্যাস তৈরি করবে- তাকে আজীবন মিডেল ক্লাস হয়েই থাকতে হবে। আর যে রিস্ক নিবে, হেরে গিয়েও লেগে থাকবে, সে মিডেল বা লোয়ার ক্লাসে জন্ম নিলেও আপার ক্লাসে ঠিকই উঠে যাবে।
আজকে যদি তোমার চাকরিটা চলে যায়। আজকে যদি তোমার ফ্যামিলির মেইন ইনকাম সোর্সটা বন্ধ হয়ে যায়। তোমার কি হবে? তোমার ফ্যামিলির কি হবে? যতটুকু সেভিংস আছে সেটা দিয়ে কতদিন চলবে?
বিয়ে জিনিসটাকে বিভীষিকাময় করে তুলছে - পার্লার, ফটোগ্রাফার আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চেংড়া পোলাপানগুলা। প্রি-ওয়েডিং, পোস্ট-ওয়েডিং, মুখের মধ্যে ময়দা পেইন্টিং - হাবিজাবি বলে নিমিষেই দেড় দুই লাখ গায়েব করে দেয়। মেয়ের বাপের তিল তিল করে সঞ্চয় করা টাকা, ছেলের সিএনজিতে না উঠে লোকাল বাসে করে অফিস গিয়ে বাঁচিয়ে রাখা পয়সা অযথা নষ্ট করবেন না। পয়সা দিয়া, লাইট ক্যামেরা একশন শুনার মাঝে মাঝে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তাকে বিয়ের প্রোগ্রাম বলে না, টিভি সিরিয়ালের শুটিং বলে।
যে মেয়ে সারা জীবনে একটা থালা বাসনও ধোয়নি, সেই এক লাফে হয়ে গেলো রাঁধুনি। সার্টিফিকেটগুলো সুটকেসে বন্ধী রেখে রান্না ঘরে পেয়াজ কাটাতে বাধ্য হয়। বড় হবার স্বপ্নগুলো পেয়াজের ঝাঁজের সাথে মিশিয়ে চোখের কোনা দিয়ে, ফোটায় ফোটায় অশ্রু ফেলে। অথচ ছেলেদের চাইতে বেশি কষ্ট করে, অনেক অনেক বেশি সামাজিক বাধা অতিক্রম করে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে। সারাজীবনের কষ্টের আউটপুট আসার আগেই ক্যারিয়ার শেষ।
বিয়ের আধুনিক নাম- 'শো অফ'। এই শো-অফ একদিন করলে হবে না। ছেলের হলুদ, মেয়ের হলুদ, আকখ্ত, বিয়ে, বৌভাত, হাবিজাবি করতে করতে একই কাপলের চার পাঁচবার বিয়ে দিয়ে ফেললেও শো-অফ শেষ করা যাবে না। সবগুলা প্রোগ্রামে আলাদা ড্রেস, গোল্ডের অর্নামেন্টসের প্রদর্শনী করা লাগবে। হলুদে স্পেশাল ডান্স পার্টি করে ফেইসবুকে ভিডিও আপলোড করা লাগবে। সব প্রোগ্রামে ভিন্ন ভিন্ন পার্লারের প্যাকেজ, স্টেজের থিম, খাবারের মেনু, লাইটিং ওয়ালা ভেনু, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হায়ার করা লাগবে।
ফ্যামিলি মিডল ক্লাস হইলেও, ছেলেমেয়েগুলা কিন্তু আপার ক্লাস। পুরাই আপার ক্লাস। তাগো ল্যাপটপ লাগবে, স্মার্টফোন লাগবে, ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট লাগবে, জন্মদিনে বন্ধুদের খাওয়াতে হবে, বান্দরবন ঘুরতে যাইতে হবে। কোন একটা জিনিস সময়মত জোগান দিতে না পারলে, মন খারাপ করবে, চিল্লাচিল্লি করবে, মান অভিমান করবে। তবুও বুঝতে চাইবে না সাড়ে উনিশ হাজার টাকার মাসিক বেতনটাকে হাজারবার পারমুটেশন কম্বিনেশন করলেও সংসার খরচ মিটিয়ে একটা স্মার্টফোন কিনার টাকা বের করা যায় না।
সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলে মিডল ক্লাস ফ্যামিলির আম্মুরা - ক্ষিধা নাই, পাতিলে এখনো ভাত আছে, জ্বর কমে যাচ্ছে, ডাক্তার ডাকা লাগবে না, আগের ঈদের শাড়িটা এখনো নতুনের মত আছে, নতুন কিনা লাগবে না
সুখী হবার সাথে সেটিসফেকশন বা সন্তুষ্টির সম্পর্ক আছে, টাকা-পয়সা গাড়ি-বাড়ির সম্পর্ক নাই। অথচ আমরা সবাই ভাবি, নিজের একটা বাড়ি হইলে, মাল্টিন্যাশনালে একটা চাকরি হইলে জীবনে খালি সুখ আর সুখ। হ্যাঁ, বাড়ি-গাড়ি হইলে কয়েকদিনের জন্য সুখ আসবে। কিন্তু সেটা টিকবে না। সুখী মানুষেরা সম্পদের পিছনে না ছুটে, সম্পর্কের পিছনে ছুটে। ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মিলেমিশে জীবন উপভোগ করে।
আমাদের জীবনগুলো বেড়ে উঠে কিছু প্রি-ডিফাইন্ড ফর্মুলা, কিছু মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে। বাবা মা শিখিয়ে দিয়েছে, ভালো স্কুলে ভর্তি হলে, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলে, জীবন সফল হয়ে যাবে। কিছুদিন পরে সেটা চেইঞ্জ করে, ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাইলে, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হইলে, লাইফে আর কিছু করা লাগবে না।
গত সাত বছর প্রিমিয়াম লীগের সব কয়টা ম্যাচ দেখে আপনি কি লাভ করেছেন। হয়তো ভালো লেগেছে ইনজয় করেছেন, এই ছাড়া আর কিছু? না আর কিছু নাই। যে খেলছে তার অনেক মিলিয়ন ডলার লাভ হইছে। যে তারে স্পন্সর করছে তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি হইছে। ওরা ইমোশনাল বিজ্ঞাপন দিয়ে, আপনার জীবন থেকে মূল্যবান সময় আর পকেট থেকে টাকা বের করে নিয়ে, সেই টাকা থেকে কিছু টাকা খেলোয়াড়দেরকে দিয়েছে। তার বিনিময়ে আপনি কি পেয়েছেন?
তোমার পড়ালেখা, ক্যারিয়ার, ফিউচার, প্রেম, পারিবারিক, এমনকি ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারো
প্রেম রিলেটেড প্রশ্ন, হতাশা কিংবা কনফিউশন রিলেটেড প্রশ্নের উত্তর
শুধুমাত্র কম্পিউটার অন-অফ করতে পারেন এমন মানুষও ওয়েবসাইট বানাতে পারবে।
নাকানি চুবানি খাইতে খাইতেও মানুষ হইতে পারলাম না। ড্রিম জব ল্যান্ড করাতো দুরের কথা।
যদি লোকসম্মুখে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে বা উপদেশ, বকাঝকা, গালাগালি, হুমকি দিতে সংকোচ লাগে তাইলে ইমেইল করে দেন [email protected]