লেখকের সাথে পরিচয় ফেসবুকে। তাঁর জীবনঘনিষ্ঠ বাস্তবধর্মী প্রত্যেকটি লিখা চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। খুব সহজ-সরল সাবলিল ভাষায় লিখেন তিনি, কেতাবি ভাষা নয় যে ভাষা আমরা দৈনন্দিন জীবনে ব্যাবহার করি! অপেক্ষায় থাকি কখন তিনি ফেসবুক লাইভে আসবেন। অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এই মানুষটির ফেসবুক ফলোয়ার প্রায় ৪২ হাজার, আমি তাদের মধ্যে একজন। তাঁর কোনো লিখা যাতে মিস না হয় সেজন্য ফলোয়িং অপশনে 'see first' দিয়ে রেখেছে এই হাবলু!
গতবছর একজন বন্ধু প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত বইয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি 'হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং' বইটা সাজেস্ট করেছিলাম। আমি নিজে প্রোগ্রামিং সম্পর্কে অতটা আগ্রহী না হলেও বইটি নিয়ে আমার শতভাগ আস্থা ছিলো। কারণ বইটির লেখক হাবলু দ্য গ্রেট ঝংকার মাহবুব ভাই!
রকমারি.কমের মাধ্যমে লেখকের এবছর প্রকাশিত বহুল আকাঙ্ক্ষিত 'রিচার্জ your ডাউন ব্যাটারি' আজ হাতে পেলাম। যদিও দুইটা অর্ডার করে পেয়েছি একটি। সে যাই হোক সাগ্রহে একটানা পড়ে ফেলেছি। লেখক পরিচিতিটা বেশ উপভোগ্য ছিলো, ব্যতিক্রমী তো বটেই। 'উৎসর্গ' অংশটিও অসাধারণ। অধ্যায় শেষে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন উক্তি জুড়ে দেয়া হয়েছে ইংরেজিতে। আপনি যদি একবার মনোযোগ দিয়ে পড়া শুরু করেন, শেষ না করে উঠতে পারবেন না নিশ্চিত। বইটিকে আমি ১০ এর ভেতরে ৮ দেবো।
প্রতিদিনই অসংখ্য পজিটিভ উক্তি, উপদেশ, অণুপ্রেরণামূলক গল্প, জিরো থেকে হিরো হবার কাহিনী, সুখি হবার নানা উপায় চোখে পড়ে আমাদের। এগুলো দেখে একটা মুহূর্তে হুট করেই মোটিভেশন জেগে ওঠে কিন্তু পরেক্ষণেই দপ করে নিভে যায়। আবারও হতাশ লাগে, সবকিছু ভেঙে চুরমার করতে ইচ্ছে জাগে, নিজেকে একা মনে হয়, কিচ্ছু ভালো লাগে না, অতীতের ভালো সময়গুলো কিংবা অর্জন কিছুই মনে আসে না তখন। এমনকি মৃত্যুচিন্তা তাড়া করে বেড়ায় কখোনো। তাহলে বইটিতে কী এমন আছে যা অন্যসব থেকে আলাদা? সেজন্য পুরো বইটা পড়তে হবে। বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাসুম ভাই এবং আবিরের কথোপকথন দিয়ে শুরু। এগিয়েছে বিভিন্ন সিচুয়েশনে নিজেদেরকে গুঁটিয়ে না রেখে, হাল না ছেড়ে সামনে অগ্রসর হবার আলোচনা দিয়ে। রিস্ক নেয়া, লেগে থাকা, চাকরির পাশাপাশি ব্যাবসার গুরুত্ব এরকম বিভিন্ন বিষয় লেখক নিপুণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন নতুন নতুন চরিত্রের মাধ্যমে।
বইয়ের শেষের দিকে আছে লাইফের যে ব্যাটারি, সে ব্যাটারির চার্জ পরিমাপের ১০ টি নির্দেশক। যার মাধ্যমে ব্যাটারির মালিক তার চার্জের লেভেলটা বুঝে করণীয় সম্পর্কে সচেষ্ট হবেন। আরও আছে জীবন লাইনে আনার কায়দাকানুন এবং লেখকের পক্ষ থেকে স্পেশাল পুরস্কার!
সত্যি বলতে কী দিনকে দিন আমাদের জীবন যান্ত্রিক হয়ে উঠছে, প্রতিযোগিতার ভীড়ে জীবনকে উপভোগ করার মতো সময় আমরা বের করতে পারছি না। কারও জীবন খুঁড়িয়ে চলছে কেউবা আবার হতাশ হয়ে জীবন থেকে পালানোর পথ খুঁজছে। ব্যাটারিতে চার্জ শেষ হয়ে গেলে যেমন পুনরায় চার্জ দিতে হয়, ঠিক তেমনি জীবনকেও চার্জ দিতে হয়- ধাক্কা দিতে হয়। একেকজনের চার্জার একেকরকম হতেই পারে, তবে অবশ্যই চার্জার সঙ্গে রাখতে হবে।
আমি মনে করি,'রিচার্জ your ডাউন ব্যাটারি' বইটির মূলভাবও হতে পারে লাইফ চার্জের অন্যতম অনুষঙ্গ। নিজের ভেতর পরিবর্তন অনুভবের জন্যে বইটি পড়ুন। দেশের লাখ লাখ হতাশাগ্রস্থ তরুণ ঘুরে দাঁড়াক, তাদের জীবনের ব্যাটারি ডাউন হলেই যেন রিচার্জ করার সুযোগ পায় সেই প্রত্যাশা থাকবে। তারুণ্যের জয় অনিবার্য!
যদি লোকসম্মুখে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে বা উপদেশ, বকাঝকা, গালাগালি, হুমকি দিতে সংকোচ লাগে তাইলে ইমেইল করে দেন [email protected]