বুক রিভিউ এর উপর এটাই আমার প্রথম ব্লগ। ২০১৮ সালের শুরুতে আমি যে কয়টি মাইল স্টোন ঠিক করেছিলাম তার মধ্যে একটি ছিলো। “প্রতি মাসে এট লিস্ট ৪টি করে বই কিনবো এবং পড়বো।” সেই তালিকায় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম পড়া বই টি নিয়েই এই রিভিউ টা করা। আজকে যে বইটা নিয়ে রিভিউ করতে যাচ্ছি সেটা হচ্ছে ঝংকার মাহবুবের লেখা- রিচার্জ your ডাউন ব্যাটারি (Recharge your down battery)। বইটি সম্পর্কে রিভিও করার আগেই রেটিং টা দিয়ে নেই যাতে বইটি পড়ার ক্ষেত্রে আপনাদের আগ্রহ আরকে দফা বৃদ্ধি পায়।
★★★★★
বইটি ৫ স্টার পাওয়ার দাবীদার শুধু একারণেই যে বইয়ের লেখক এ দেশের গোটা যুব সমাজকে কিভাবে চাংগা করা যায় সে বিষয়ের উপরই তিনি বারবার ফোকাস করে গেছেন। বইটি পড়া মাত্র যে কেউ ই বুঝতে পারবেন যে এখানে বিন্দু মাত্র তথাকথিত ন্যাকামি টাইপ কোন কথা ছিলো না। তুই তুকারি করেও যে মানুষকে এতোটা ইন্সপায়ার করা যায় তা শুধু এই বইটা পড়লেই বুঝে নেওয়া সম্ভব। “তুই” শব্দটা যদিও অমার্জিত তবুও এখানের তুইটার মাঝে রয়েছে দায়িত্ব বোধ আর কিছু করে দেখানোর তীব্র আর্তনাদ।
আমার এই বইটা পড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আরো কিছু অনুপ্রেরণামূলক বাক্য বা শব্দ শেখা যেগুলো আমি অন্যদের মাঝে ব্যবহার করতে পারি। প্রতি বছর ভার্সিটি এডমিশনের ক্লাস নেওয়ার সময় প্রথম দিকে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে যতটা আনন্দ দেখতে পাই ফলাফল দেওয়ার পর তার ঠিক ৩ গুন বেশি হতাশার স্টাটাস আমার ফেসবুক টাইম লাইন জুড়ে ভাসতে থাকে। এই বইটির বেশ কিছু কথা আমার মনে ধরেছে যা আমি আগামি এডমিশন ক্লাস গুলোতে স্টুডেন্ট দের সাথে শেয়ার করবো বলে মনস্থির করেছি। অর্থাৎ হতাশ হয়ে যাওয়া বাচ্চা গুলোকে আরেকটু বেশি ভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারবো, ইন শা আল্লাহ ।
ইতোমধ্যেই আমি কত জন ছোট ভাই বোন কে যে এই বইটা কিনতে বলেছি তা আমার নিজের ও জানা নেই। হয়তো লেখকের সাথে যোগাযোগ করলে বেশি কিছু কমিশন হাতিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তার থেকে বড় কথা আমি সবাইকে যে কথা গুলো আজ ৪-৫ বছর ধরে বেকুবের মতন বুঝিয়ে আসছি সেই কথা গুলোই লেখক আরো স্পষ্ট ভাষায় তার লেখনির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ওভার নাইট লেখক বনে যাওয়া খুব ইজি একটা ব্যপার কিন্তু লেখা দিয়ে সোসাইটিতে ইফেক্ট ফেলানো যেন তেন ব্যাপার নয়। যারা প্রকৃত পক্ষে দেশ নিয়ে ভাবে তারা মূলত যুব সমাজকে নিয়েই ভাবে আর লেখক তার লেখার মাধ্যমে সেটাই প্রকাশ করতে চেয়েছেন যদিও তিনি সেটা খুব একটা বুঝতে দেন নি। কিন্তু তার এই লেখার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে যদি ১০০ ছেলেও নতুন করে ৩-৪ টা স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে তবে সেটা গোটা জাতীর জন্যেই ভালো। একজন বুয়েটের ছাত্র হয়ে যে ব্যক্তি ব্যবসাকে ফোকাস করতে পারে সে আসলেই লাখে একজন। স্বেচ্ছায় ঘাড়ে চাকরির বোঝা চাপিয়ে নেওয়া এই জাতির পক্ষে এমন লেখকদের সমাদর করা নিতান্তই কঠিন।কিন্তু আপনারা যারা এখনো ছাত্র অথবা ৩০ এর কোঠা এখনো পার করেন নি তাদের জন্য এই বইটি আমার তরফ থেকে হাইলি রিকমেন্ডেট । BCS এর জন্য পড়া পড়ে যারা দুনিয়া উল্টে ফেলছেন তারা অনুগ্রহ করে বইয়ের ১১০-১৪ নাম্বার পাতা গুলো একটু ভালো করে পড়ে নিজের সাথে প্রয়োগ করে দেখবেন, আর একবার হলেও ভাববেন আপনি আসলে নেতানো মুড়ি না মচমচে চমচম।
এই বইটির আরো একটি ভালো দিক হচ্ছে এক দুই পৃষ্ঠা পরপর লেখক কিছু ভালো ভালো মোটিভেশনাল খোউট যুক্ত করছেন যার দুই একটা খোউট আপনার চিন্তা চেতনা সম্পূর্ণ রুপে পাল্টে দিতে সম্ভব। চাইলে একবার ঘুরে আসতে পারেন লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন । তবে হ্যা আরো একবার জোর দিয়ে বলছি, “ নিজেকে যদি আসলেই দু হাত সামনে দেখতে চান, নিজেকে আরেক বার রিচার্জ করতে চান তবে কষ্ট করে বইটি কিনে পড়বেন। আর কিনতে অনিহা থাকলে লেখক কে টেক্সট অথবা মেইল করুন, আমার ধারণা লেখক আপনাকে একটা বই উপহার দেওয়ার মতন মন মানুষিকতা রাখেন যদিও আমি শুধু মাত্র তাকে তার এই লেখার মাধ্যমেই চিনি।”



