আপ্নে মানুষ হইলে, আপ্নার মেজাজ খারাপ হইবেই। আর মেজাজ খারাপ হইলেই, মনডা চায় গিয়া ঠাটায়া কইসা কইসা ধুমধাম কয়েকটা চড় দেই। আর হাই লেভেলের মেজাজ খারাপ হইলে, কাইট্টা কুচি কুচি কইরা নারায়ণগঞ্জ পাঠায়া দিয়ে ইচ্ছা করে। সেই মেজাজ খারাপ হোক না বসের বা বয় ফ্রেন্ডের উপ্রে। কিংবা ক্লাস টিচার, বাসার দারোয়ান, সিনজি ড্রাইভার, ফুচকার দোকানদারের উপ্রে।
মেজাজ খারাপ হয় সাধারণত কেউ বকা দিলে, অন্য কারো সামনে হ্যারাস বা অপমান করলে। সখের কোনো জিনিস নষ্ট করলে। বার বার পাঠানোর পরেও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করলে। বা মেসেজের বক্সে " ✔ Seen at 1.12am" দেখায়, তারপরেও মেসেজের রিপ্লাই না দিলে। হিন্দি সিরিয়ালের জ্বালায়, ফুটবল খেলা দেখতে না পারলে। আমার ক্রাশ আমার ছবিতে লাইক না দিয়া, আমার ফ্রেন্ডের ছবিতে লাইক দিলে। বন্ধু গার্লফ্রেন্ড লইয়া, আমার ক্যাম্পাসের সামনে দিয়া, রঙ্গ কইরা হাইট্টা গেলে। কেউ অন্যায় ভাবে আপনার প্রাপ্য কিছু কেড়ে নিলে। বার বার চেষ্টা করেও চান্স পাইতে ব্যর্থ হলে। অথবা ডাইরেক্ট ছাঁকা দিয়ে দিলে।
মেজাজ খারাপ হৈলে আম্রা সাধারণত - ১. চিল্লাচিল্লি কইরা ফাটাইয়া ফেলি। আর চিল্লাইতে না পারলে, ফ্যাল ফ্যাল করে কাইন্দ্যা দেই। তবে হাই লেভেলের মেজাজ খারাপ হৈলে, দীর্ঘ সময় ধরে মাথা গরম হয়ে শরীরের রক্ত দ্রুত চলাচল করতে থাকে। হার্টের প্রেসার বেড়ে যায়। (ইন্টারমিডিয়েটে বায়োলজি ছিলো না তো, এর চাইতে বেশি কিছু লিখতে পারতেছিনা) ২. যার উপ্রে মেজাজ খারাপ হইছে, তার সামনে থেকে সরে যাই। এক রুম থেকে অন্য রুমে চলে যাই। বউ বকা দিলে, বাথরুমে গিয়া বসে থাকি। অধীনস্থ কারো উপরে মেজাজ খারাপ হইলে, আবুল হায়াত স্টাইলে বলি, বহিষ্কার হও, নিষ্ক্রান্ত হও। আবার চাল্লুগুলা যখন দেখে কোনো একটা ডিসকাশন মেজাজ খারাপ হবার দিকে যাচ্ছে, তখন ওই টপিক চেঞ্জ করে দেয়। যেমন, ম্যাডাম হইলে শাড়ির প্রশংসা আর টিচার হইলে তার বৌয়ের প্রশংসা। ৩. প্রিয় মানুষের সাথে মন খারাপ হইলে, তাকে সারপ্রাইজ, গিফট দেয় বা ঘুরতে নিয়ে যায়। যেমন, দ্যা গ্রেট অনন্ত বর্ষারে BMW গিফট দিছিলো। বা জাস্টিন বিবারের কয়েকটা ফালতু গানের প্রশংসা করে। ৪. উল্টা দিক থেকে গুনতে শুরু করে দেয়। ১০০ থেকে গুনা শুরু করে ১ পর্যন্ত আসতে আসতে মেজাজ ঠিক হয়ে যায়। রাস্তায় গিয়ে ২০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা হাঁটে বা কোনো ভিক্ষুকের সাথে ১০ মিনিট আড্ডা দেয়। অথবা টঙ্গের দোকানে গিয়া কড়া এক কাপ চা খেয়ে, বেনসনের ধূয়া উড়ায়। জিমে গিয়া পাঞ্চিং ব্যাগে কয়টা ঘুষি মারে। জিম করে, ফিজিক্যালি টায়ার্ড হইলে এম্নিতেই রাগ কমে যায়। ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খাইতে যায়। একবেলা ভালো খাইলে, পকেটের টেকাটুকা সব শেষ হয়ে গেলে, চিন্তাভাবনা ঐদিকে ডাইভার্ট হয়ে যায়। পছন্দের গান বা জোকস শুনে বা ফানি টিভি সিরিয়াল দেখে। ৫. আরো বেশি লেভেলের মেজাজ খারাপ হইলে, দুইটা পলিথিনের মধ্যে কাঁচের গ্লাস ঢুকাইয়া যত জোরে সম্ভব আছাড় দেয়। রাগ কমে যায়। দুইটা পলিথিনের মধ্যে ঢুকায়, যাতে কাঁচের গ্লাসের ভাঙ্গা অংশ, এইদিক ঐদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে না যায়। পরে অনেক কষ্ট করে পরিষ্কার করা লাগবে বা নিজের পায়েও ঢুকে যেতে পারে।
আসলে উপরের কোনটাই ভালো সল্যুশন না।
ধরেন, আপনার ছেলে, একটার পর একটা অঙ্ক পরীক্ষায়, তামিম ইকবালের মতো ডাক মারতেছে। লজ্জায় অপমানে, ছেলেরে কেটে কুচি কুচি করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। এক ঘণ্টা টানা গালাগালি দিলেন। ছেলে মাথা নিচু করে বসে আছে। এক ঘণ্টা না, এক হাজার ঘণ্টা রেকর্ড করে গালাগালি করলেও কোনো লাভ হবে না। বরং ছেলেরে বুকে জড়ায় ধরেন। বলেন, বাবা তুমি নিজের চেষ্টায় ১০০ তে ৩ পাইছো। সেটার জন্যই আমি গর্বিত। ছেলেকে আশ্বস্ত করেন। যদি নিজের পণ্ডিত-গিরি ছেলের মধ্যে পয়দা করতে চান। তারে নিয়ে বসেন। একটু সময় দিয়ে ইজি হোন, ফ্রেন্ডলি হোন। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে। ছেলের যদি অঙ্ক পড়তে ভালো না লাগে। জোর করে গিলালে লাভ হবে না। বদ হজম হবে। বরং সে যদি মিউজিক ভালো করে, সেটা করতে দেন।
কারো উপরে মেজাজ খারাপ হইলে, সেটার জন্য সাথে সাথে রিয়াক্ট করবেন না ভুলেও। মেজাজ যত বেশি খারাপ হবে, ডিসিশন তত বেশি ভুল হবে। পিরিয়ড। বরং দাঁত কেলিয়ে হেসে দেন। হোক না কৃত্রিম হাসি, তাও হাসেন। তার ভুলের রেস্পন্সিবিলিটি নেন। অফিসের কর্মচারীর উপর মেজাজ খারাপ হইলে, তাকে বের না করে দিয়ে, চেয়ারে বসান। কফি খাওয়ান। তার ভুল যে হইসে, সেটা সে নিজ থেকেই বুঝতে পারবে। এবং পরেরবার সঠিকভাবে করে আনবে। আপনি যদি চিল্লাচিল্লি করেন, তাইলে একটা কাজ পরেরবার হয়তো ভুল করবে না। কিন্তু অন্য পাঁচটা কাজে খেই হারিয়ে ফেলবে।
ধরেন, বান্ধবী বা বউ বা বয় ফ্রেন্ড কিছু একটা উল্টা পাল্টা করে ফেলছে। সেটা সাথে সাথে বলার কি ধরকার। ধৈর্য্য ধরেন। অন্য কিছু করে টাইম পাছ করেন। ঐটা নিয়ে কথা বলার টাইম পাবেন। হয়তো পরেরদিন সে নিজ থেকেই ম্যাসেজ দিবে, "সরি, চুক চুক চুড়ুই পাখি। এমনটা আর করবো না আমি। প্রমিজ। এইবার একটু হাসো। প্লিজ।" সব ল্যাটা চুকে যাবে। আবার কম্বাইন্ড প্রোপিক দিবেন। আর না হইলে, নিজেরে বিক্রয় ডট কমে পোস্ট করে দেন। কেউ না কেউ ভাঙ্গারি হিসেবে থার্ড-ফোর্থ হ্যান্ড জিনিস কিনে ফেলবে। নিজে যেহেতু অরিজিনাল না, অরিজিনাল জিনিস খুইজেন না।
তবে, যে বিষয়েই মেজাজ খারাপ হোক না কেনো, সেটা নিয়ে ভাবেন। আপনারও কিন্তু ভুল হইতে পারে। আপনি ভুল বুঝতেও পারেন। আর অন্যের দোষত্রুটি হইলেও সেটা নিয়ে বেশী ঘাটাঘাটি করার কি দক্কার। সেগুলা যত দ্রুত ভুলে যাবেন, তত বেশি ভালো থাকবেন। কেউ সমালোচনা করলে, সেটা নিজেকে গড়ে তুলার সুযোগ হিসেবে নেন। কেউ আপনার কোনো লিমিটেশন নিয়ে অপমান করলে,নিজের মধ্যে একটা চাপা ক্রোধ তৈরী করেন। ভিতরে ভিতরে চ্যালেঞ্জ নেন, নেক্সট মাসে দেখায় দিমু টাইপ। আর আপনার যদি ঘনঘন মেজাজ খারাপ হয়, তাইলে আপ্নার সমস্যা হচ্ছে। আপনি অন্যদের এটেনশন দেন না, কম্প্রোমাইজ করতে জানেন না।
শেষ কথা হচ্ছে, "মেজাজ খারাপটা ক্ষণিকের আর সম্পর্কটা চিরদিনের"
হুট হাট করে মাঝে মধ্যে লেখা আসবে
যদি লোকসম্মুখে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে বা উপদেশ, বকাঝকা, গালাগালি, হুমকি দিতে সংকোচ লাগে তাইলে ইমেইল করে দেন [email protected]