জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আসলে কি করণীয়

যত বেশি প্রশ্রয় দিবে, তত বেশি কুঁকড়ে খাবে

মানসিক অবস্থা রিলেটেড মূল পাতা

জীবনের প্রতি আপনার বিতৃষ্ণা আসতেই পারে। এমন কিছু করে ফেলতে পারেন বা ঘটে যেতে পারে যার কারনে আপনি নিজেকেই নিজে ঘৃনা করছেন। আপনার সব স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতেই পারে। বাচার একমাত্র অবলম্বন যা ছিলো তাও খুইয়ে ফেলতেই পারেন। সবচয়ে কাছের মানুষটা বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারে। প্রেমখানরে অমর করে ফেলতে চাইতেই পারেন। একটা মজনু মজনু ফিলিংস আসতেই পারে। আপনার বুকের ভিতর চাপা কষ্টগুলো, মলম লাগানো তো দূরে কথা, চিনচিন ব্যথা কান পেতে শুনার জন্য বাসায় একটা টিকটিকিও নাই। এমন ঘটনা ঘটে গেছে যে লজ্জায়, ঘৃণায় মুখ দেখাতে ইচ্ছা করছে না। হাজার বার চেষ্টা করেও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পারেন নাই। সারা জীবন জ্যামের মধ্যেই পড়ে ছিলেন। যেটাতেই হাত দিছেন সেটাই ব্যর্থ। সিম্পল ব্যর্থ না, সুপার ডুপার ব্যর্থ। এখন আপনার কাছে তিনটা অপশন আছে -

অপশন:

১. সবচেয়ে সহজ হচ্ছে সুসাইড খাইতে পারেন। কয়দিন আগে রবিন উইলিয়াম করছে। ন্যান্সি চেষ্টা করছে। কচুগাছ টাইমস বিডি ডট কমে ফলাও করে নিউজ আসছে। আপনিও ট্রাই মারতে পারেন। এই চান্সে হালকা পপুলারও হয়ে যেতে পারেন।

২. আপনি চুপচাপ ঘরের মধ্যে পড়ে থাকতে পারেন। দুনিয়ার সবার কাছ থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখতে পারেন। আপনার খারাপ অবস্থা আরো খারাপ করে ফেলতে পারেন।

৩. আপনি ঘুরে দাড়াতে পারেন। ঝেড়ে ফেলতে পারেন যা হইছে সব কিছু। আগের অবস্থার চাইতে আরো অনেক অনেক ভালো করতে পারেন। মরে গেলে গ্যারান্টি আপনি এর চাইতে ভালো থাকতে পারবেন না। কারণ ধর্মে বলছে দোজখের আগুনে পুড়বেন। যেটা দুনিয়ার আগুনের চাইতে ৭০ গুন বেশি। ভাই, আপনি দুনিয়ার একগুনই সইতে পারতেছেন না আর সখ করে ৭০ গুনে ঝাপ দিচ্ছেন। বুইঝেন কিন্তু।

করনীয়:

১. একটু পিছন ফিরে দেখেন। আপনার চেষ্টাগুলোকে মূল্যায়ন করেন। ওভারঅল আপনি হয়্তো ব্যর্থ। কিন্তু এর মধ্যে দুই এক ডিগ্রী বা মাইক্রো লেভেলের অনুকূল কিছু নিশ্চয়ই ঘটছে। জাস্ট ফ্ল্যাশ ব্যাক করে দেখতে পারেন। একদম ইচ্ছা না করলে, করার দরকার নাই। ধরেন, ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করতে পারতেন না। একদম শেষের দিকে থাকতেন। তবে মোকছেদের চাইতে দু চার নম্বর বেশি পাইতেন। পরীক্ষায় নিয়মিতই ফেল করলেই, টিচার টুলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে পিঠের মধ্যে মারতো দেদারছে। ক্লাস সেভেনের বিজ্ঞানে মোকছেদ যথারীতি ফেল করায়, যেই টেবিলের নিচে মাথা ঢুকাইছে আর টুপুস করে তার প্যান্ট নিচে পরে গেছিলো। হয়তো নিজের অজান্তেই হেসে দিছেন সেই ঘটনা মনে করে। আর সেটা না হলেও আপনি সফল কেননা অন্তত আপনার প্যান্ট খুলে পড়ে যায়নি ক্লাসে।

২. একটা কাগজ কলম নিয়ে বসতে পারেন। দুইটা কলাম বানাবেন। বামপাশে আপনি কি কি করছেন আর ডানপাশে আপনার কি কি করা উচিত ছিলো। ডানপাশের গুলা বাস্তব সম্মত নাও হতে পারে। তাও লিখে ফেলেন। আবার যদি করেন তাইলে এইটা কাজে লাগবে। তিন ক্যাটাগরি করেন। কোনগুলা আপনি ভালো করছেন, কোনগুলা ভালো কিন্তু আরো ভালো হতে পারতো আর কোনগুলা খারাপ হইছে পরের বার ভুলেও করা যাবে না।

৩. অল্টারনেটিভ রাস্তা চিন্তা করেন। ধরেন আপনি রাজশাহি থেকে ঢাকায় আসবেন। জামা কাপড়ে দুর্গন্ধ দেখে গ্রীনলাইনের কাউন্টারে আপনাকে এসি বাসের টিকেট দিলো না। তারমানে এই নয় যে আপনার ঢাকায় আসার আর কোনো উপায় বাকী থাকলো না। আপনি লোকাল বাসে ট্রাই করেন। সেটা না হলে, ট্রেনে। তারপরে ডাইরেক্ট বাস না পাইলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে। না হইলে টেম্পু রিক্সা ধরে। অথবা নদী পথে। আর শেষমেষ পায়ে হেটেও আসতে পারেন। আর বুদ্ধি হালকা থাকলে দুই কেজি বাদাম কিনে ট্রেনে বিক্রি করতে করতে ঢাকায় চলে আসবেন ফ্রি আর মাঝখানে কিছু মুনাফা হয়ে যাবে। অল্টারনেটিভ উপায় নিজে খুঁজে না পাইলে অন্য কারো সাথে আলোচনা করেন।

৪. কারো সাথে কথা বলেন। শেয়ার করেন। একজন শুনতে না চাইলে অন্যজনের কাছে করেন। পরিচিত কেউ হতে হবে এমন না। ডিপার্টমেন্ট এর সিনিয়র টিচার হতে পারেন। অথবা আপনার টেডি বিয়ার থাকতে পারে বা পোষা কুকুর বা বিড়াল তাদেরকে বলেন। আর কাউরে না পাইলে একটা গাছের সামনে দাড়িয়ে আপনার মনের দুঃখের কথা বলেন।

৫. কোনো জায়গায় আপনার যেতে ভালো লাগলে সেটাতে যান। বা কোনো কিছু খাইতে ভালো লাগলে সেটা খান। বা প্রিয় কোনো মুভি বা নাটক বা হাসির কোনো ভিডিও দেখেন। ফেইসবুকে ফানি ভিডিও বা লেইম জোকস পরেন। আমি যেমন, বিগ ব্যাঙ থিওরি, থ্রি ইডিওটস, টু এন্ড এ হাফ ম্যান ইত্যাদির ভিশন ফ্যান। মন ভালো থাকলেও দেখি খারাপ লাগলেও দেখি। এইগুলার এক একটা সিন ৫০বার করে দেখছি তারপরেও চান্স পাইলে রিভাইজ দেই। তবে ভুলেও সাইকো বা ক্রেজি টাইপ মুভি দেখবেন না। যেমন, saw বা গেইম অফ থ্রোন, ব্রেকিং ব্যাড, এইসব হাবি জাবি আছে না।

৬. মোবাইলের ফোনবুকের A থেকে Z পর্যন্ত যান। তারমধ্যে কিছু ফ্রেন্ড আছে ৪/৫ বছর কথা হয়ে না। কিন্তু একসময় প্রতি বিকেলে হাটতে যাইতেন। তাদের কে একটা করে ম্যাসেজ দেন বা কল করেন। পুরান কিছু স্মৃতি ভেসে উঠবে। বর্তমানের সমস্যা অল্প সময়ের জন্য হলেও হারিয়ে যাবে। বা ফেইসবুকে গিয়ে সার্চ দেন, "Pictures of my friends before 2008" অনেক মজার পিকচার দেখবেন। লাইক এবং কম্মেন্ট করেন। পুরান বন্ধুদের সাথে একটা কনভারসেশন ঝমে যাবে অনেক অনেক দিন পরে।

৭. একটু ডিফারেন্ট কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কোনো কাজের মধ্যে। দরকার হলে ২ ঘন্টা পায়ে হেটে ধানমন্ডি থেকে গুলশান যান এবং ফেরত আসেন। রাস্তার মধ্যে কেউ একজন ভারী একটা বস্তা নিয়ে পার হতে পারছে না। তাকে পারে করে দেন। কোনো ভিখারীর সাথে ঝমিয়ে আড্ডা দেন বা পুচকার দোকানে গিয়ে বলেন, আজকে ফ্রি সব প্লেট আপনি ধুয়ে দিবেন। শারিরিক পরিশ্রম করেন। দেখবেন, ঘুম আনানোর জন্য ট্যাবলেট খাওয়া লাগবে না।

৮. সামাজিক কোনো কাজের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করেন। লাইক ভলান্টিয়ার বা পথশিশুদের নিয়ে অনেক গ্রুপ আছে। আর না হইলে বড় একটা বস্তা নেন এবং শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত যত ঠোঙ্গা পড়ে আছে সেগুলা ক্লিন করেন। করে কোনো ঠোঙ্গাওয়্লার কাছে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে কোনো টোকাইরে লান্স কোরান। বা ঐরকম কোনো একটা গ্রুপের সাথে মিশে যান। ব্যস্ত সময় কাটান দেখবেন অনেক কিছুই ভুলে গেছেন।

৯. ড্রিম বা স্বপ্ন বাস্তবায়ন থেকে হাল্কা ব্রেক নেন। কয়দিন গ্যাপ নেন। ফ্রেশ হয়ে নেন। তারপর আবার শুরু করেন। বা লক্ষ্যটাকে মডিফাই করেন। বা লংটার্ম গোল টা আপাতত বন্ধ রেখে ছোট সহজ কিছু ট্রাই করেন।

১০. এখন লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না। বন্ধুরা সবাই পাশ করে ফেলছে আপনি ফেল। জিনিসটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেন না। তাইলে নতুন কোনো পরিবেশে চলে যান। মামার বাড়ি বেড়ায় আসেন বা দেশের বাড়িতে চলে যান।

১১. কোনো কিছু নিয়ে কারো সাথে ভুল বুঝাবুঝি হইসে। আপনার দোষ ছিলো না। ভুল হয়তো তারই ছিলো। সেটাও কয়েকবছর আগের কাহিনী। তাও গিয়ে সরি বলেন। দেখবেন সে আবার আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাবে।

বন্ধু হিসেবে আপনি কি করতে পারেন:

আপনি যখন দেখবেন আপনার গ্রুপের একজন হঠাৎ করে আর আড্ডায় আসতেছেনা। জীবন নিয়ে খুবই উদাসীন মার্কা পোস্ট দিচ্ছে ফেইসবুকে। চ্যাটে নক করলে রিপ্লাই দেয় না। বা পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করে বেশ কয়েকদিন গায়েবুল হওয়া হয়ে গেছে। ফোন ধরছে না। আপনি বুঝে ফেলবেন। ডাল মে কুছ কলা হে। তখন আপনার করনীয় হচ্ছে -

১. প্রথম কাজ হচ্ছে শুনা। ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে শুনা। অনুভব করে তাকে বুঝার চেষ্টা করা। একদম না পারলে সেটার ভান করেন। তাও ওর কাজে লাগবে। তাকে সেই লেভেলের কমফোর্ট দিতে হবে যাতে মনের কষ্ট পুরাপুরি খুলে বলে।

২. তাকে তুচ্ছ বা হেয় প্রতিপন্ন্য করবেন না। বা এই অবস্থার জন্য দায়ী করবেন না। সমবেদনা দিবেন। নিজের বা অন্যকারো খারাপ সময়ের কথা বলতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যাতে ঐ ঘটনা তার মানসিক অবস্থাকে আরো খারাপ করে না দেয়। বুঝানোর চেষ্টা বা তর্ক করতে যাবেন না, তাইলে সে ঘুটিয়ে ফেলবে নিজেকে। তার লাইনে কথা বলেন।

৩. আস্তে আস্তে তাকে আশার আলো দেখান। একদিনে চেঞ্জ হবে না। সেটার চেষ্টা করবেন না। এই সময় সাধারনত বাসার বাইরে আসতে চায় না। আপনার কাজ হচ্ছে বাইরে নিয়ে আসা। কিন্তু জোর করা যাবে না। স্লো হইলে স্লোলি চেষ্টা করা। এবং স্বাভাবিক লাইফে নিয়ে আসেন।

৪. নিজেকে শেষ করে ফেলতে পারে এমন কিছু দেখলে সরিয়ে ফেলতে হবে। আর যদি বলে ৪০টা ঘুমের ট্যাবলেট এনে দিতে। ভুলেও দিবেন না। জোড়াজুরি করলেও না। এই কমন সেন্স না থাকলে তার সাথে দেখা করারই দরকার নাই।

৫. অনেকক্ষেত্রে হেল্প নিতে চাইবে না বা ঘুটায় রাখবে। তখন এই অবস্থা তার ফ্যামিলি বা আপন জনদের জানাতে হবে। অথবা অন্য কাউকে দিয়ে চেষ্টা করান।

৬. জেদী করে তুলবেন না। ক্ষেপাবেন না। আর যদি বলে যে, আমাকে ঐটা না করতে দিলে আমি সুইসাইড করমু। সেটা নিয়ে ঝগড়া বাদিয়ে দিবেন না। ফ্যামিলির লোকজন অনেক সময় সুইসাইডের থ্রেড সিরিয়াসলি নেয় না। সেটা করা উচিত না। এইসব ক্ষেত্রে তাকে একলা ছেড়ে দেয়া বা রুমে একা থাকতে দেয়া বিপদজনক।

৭. ইদানিং মিডিয়া গুলা আরো ফালতু হইছে। কেউ সুইসাইড করলে তার লজিক বের করে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে। ফলাও করে নিউজ ছাড়ে। এইটা আসলে অন্যদের খারাপ অবস্থাকে আরো খারাপ করে দেয়। কিন্তু ডিপ্রেশন কাটায় উঠবে কিভাবে সেটা কুল করে ডিস্ক্রাইভ করে না।

জীবন মানে যুদ্ধ। আর যুদ্ধের মধ্যেই থাকে জয়-পরাজয়। আর পরাজয়ে: হতাশ হয়ে বসে থাকা যেমন আপনার চয়েস তেমনি পুনরায় ঝাপিয়ে পড়াও আপনার চয়েস।

সঙ্গেই থাকুন::

হুট হাট করে মাঝে মধ্যে লেখা আসবে


FB post




Question or Feedback:

যদি লোকসম্মুখে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে বা উপদেশ, বকাঝকা, গালাগালি, হুমকি দিতে সংকোচ লাগে তাইলে ইমেইল করে দেন [email protected]