বারে বারে লাথি দিলে তালা ঠিকই ভাঙ্গবে, স্বপ্নের দরজাটা একদিন খুলবে। তবে বারে বারে লাথি কিন্তু একটা তালাতেই দিতে হবে। একদিন জেলের তালা, আরেকদিন শপিং মলের তালা আর তার পরেরদিন গার্লফ্রেন্ডের বাসার গেটের তালায় লাথি দিলে কোনটাই খুলবে না। আর লাথি দিতে গেলে যদি মনে ভয় ঢুকে "শেষপর্যন্ত তালা যদি না ভাঙ্গে" বা আমি যে তালাটা ভাঙ্গতে পারলাম না সেটা যদি কেউ দেখে ফেলে। অথবা একসময় আমার নিজেরই পা ব্যথা করা শুরু হবে, তখন আমি কি করবো। এইটা যেই বড় আর ভারী তালা রে ভাই, এইটা মনে হয় ভাঙ্গবে না। সবে মাত্র বিয়ে করেছি। আগে সংসার টা ঘুচাই নেই, ২/৩ বছর সময় যাক। তারপর বাপ বেটা মিলে এক সাথে ভাঙ্গবো। মাসে মাসে ৮৭ হাজার টাকা ডাইরেক্ট ব্যাঙ্কে ডিপোজিট হয়। তালা ভেঙ্গেতো মাসে মাসে এত টাকা পাওয়া যাবে না। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় আপনি নিজে। কারণ, বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। ৯৯% লোক তাদের লক্ষে পৌছতে পারে না, কারণ তারা যাত্রা শুরুই করে না।
উইলিয়াম শেড বলেছেন "A ship in a harbour is safe, but that is not what ships are built for."
ধরেন, আপনি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে চান। অন্য কেউ উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেছে বা মাঝপথে কুকুরে কামড়িয়ে জ্বলাতঙ্ক বাধিয়ে দিয়েছে। সেই ভয় যদি আপনাকে ঘায়েল করে ফেলে তাইলে আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত, পাহাড়ের তলায় ঝালমুড়ি বিক্রি করা। ব্যপারটা এমন না যে, আপনি এক দৌড়ে চূড়ায় উঠে যাবেন বরং চূড়া টা আপনার লং টার্মগোল কিন্তু শর্টটার্ম লক্ষ্য হবে পরবর্তী দশ হাত। এই দশ হাত উঠার পর নেক্সট টার্গেট পরবর্তী পনেরো হাত। তারপর আপনার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী উপরে উঠার স্ট্রাটেজি বা এপ্রোচ এডজাস্ট করবেন। এমনও হতে পারে, মাঝপথে এসে আপনার বাথরুম চেপে গেলো, তখন নিচে নেমে বদনা ভর্তি পানি বা টয়লেট টিস্যু নিয়ে যেতে হলো। এইরকম একাধিক বার আপনাকে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। খুবই কমই কাজ আপনি এক চান্সে ফিনিশ করে ফেলবেন। প্রোগ্রামিং প্রজেক্টে এমন হয় যে মাঝপথে গিয়ে দেখা গেলো এই লেঙ্গুয়েজ বা ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে কাজ হবে না আবার নতুন প্রোগ্রামিং লাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করা লাগবে। আপনি প্রথম প্রথম প্রোগ্রামিং শুরু করলে এমন হবে। তবে দ্বিতীয় বার স্টার্ট ওভার করলে আগের জায়গা পর্যন্ত পৌছতে আপনার বেশি সময় লাগবে না। কারণ আপনি জানেন কেম্নে কেম্নে যাইতে হয় আর কি কি চ্যালেঞ্জ ছিলো।
হেনরি ফোর্ড বলেছেন, “Failure is only the opportunity to begin again, only this time more wisely.”
আপনার মূললক্ষ্য কিন্তু ঠিক থাকবে। আপনি দুইদিনে হাল্কা একটু বেশি আগায়ে গেলে বা মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হলে, আপনি রিলাকটেন্ট হয়ে যান। খালি ৫ মিনিটের ন্যাপ নিতে মন চায় আর তখন কিউট খরগোশ বাবুর মতো ৫ মিনিটের জায়গায় ৫ দিন নাক ঢেকে ঘুমাইলে, কচ্ছবের বাচ্চাতো চ্যাম্পিয়ন হবেই। বেশী আয়েশ করতে গেলে দেখবেন, আপনার ড্রিম অন্যকেউ এচিভ করে ফেলছে। উইল রজার্স বলেছেন, "Even if you are on the right track, you will get run over if you just sit there." এর বাংলা মানে হচ্ছে, আপনি যদি কনস্ট্যান্টলি আপনার ড্রিম নিয়ে কাজ না করেন, তাইলে অন্যকারো ড্রিম বাস্তবায়নের জন্য আপনাকে কাজ করতে হবে। যাকে আমরা বলি চাকুরি।
আপনার লক্ষ্য কিভাবে হাসিল করবেন সেটার আউটলাইন বানান। প্ল্যান বানিয়ে টাইম নষ্ট করবেন না। কারণ পারফেক্ট প্ল্যান স্বয়ং বিধাতা ছাড়া কেউ বানাতে পারবেন না। পারফেক্ট সময়, পারফেক্ট আইডিয়া, পারফেক্ট মুড বলতে কিচ্ছু কোনোদিন পাবেন না। সেগুলার জন্য চেষ্টা বা অপেক্ষা করে কোনো লাভ নাই। বরং ঝালমুড়ি খান। আর যদি সকল বিপত্তি পেরিয়ে আপনি লক্ষে পৌছে যান, তখন দেখবেন শখানেক এমবিএ গবেষণা করে বের করবে ঐটাই পারফেক্ট টাইম, পারফেক্ট স্ট্রাটেজি এবং পারফেক্ট আইডিয়া ছিলো। কিন্তু এইটা অর্জন করতে আপনাকে কত কত ত্যাগ করা লাগছে, কত চোখের জল প্লাস কপালের ঘাম প্লাস নাকের সর্দি মিশায়ছেন, কতগুলা বিনিদ্র রজনী কাটাইছেন, কতদিন পকেটে টাকা ছিলো না দুপুরে খাবার কেনার বা মেসের ভাড়া দিতে না পারার লজ্জায় হুডির ভিত্তে মুখ ঢেকেছিলেন, সেটা তারা দেখবে না। জন ক্রো বলেছেন, "It takes a strong fish to swim against the current. Even a dead one can float with it."
আপনি যতোটা মরিয়া হয়ে ঘুমাইতে চান, ততোটা মরিয়া হয়ে কাজ করলে, আপনার লক্ষের অর্ধেক রাস্তা পার হয়ে যেতেন অনেক আগেই। আর দেরী নয়, জাস্ট শুরু করে দেন। পরাজিত হবার ভয়ে আপনি যদি মাঠে খেলতেই না নামেন তাইলে কোনোদিন জিততে পারবেন না। জিততে হলে আপনাকে মাঠে নামতেই হবে। হোচট খাইতেই হবে। আপনার পায়ে চোট লাগলে সেটা কতক্ষণ থাকবে। ১০-২০ মিনিট, ১-২ ঘন্টা, ১-২দিন, ৩-৪ সপ্তাহ নচেৎ ১ বছর। তারপর কিন্তু ঠিকই ব্যথা নাই হয়ে যাবে, ক্ষত শুকিয়ে যাবে, দাগ মুছে যাবে। এই চোট নিয়ে আপনি সারা জীবন বসে থাকতে পারেন বা মাঠে নেমে আবার চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন। Never be afraid to loose.... you cant always win. জর্জ বার্নাড শ বলেছেন, "When I was young, I observed that nine out of ten things I did were failures. So I did ten times more work."
তাহলে কি খেলা দেখবো না? আমার উত্তর হচ্ছে- না, দেখবেন না। বাংলাদেশের খেলাও দেখবো না? আমার উত্তর হচ্ছে - দেখবেন। তবে কন্ট্রোল করে দেখবেন। ভালো লাগাটুকু, দেশের প্রতি প্রেমের কারণে খোজ খবর রাখবেন। একটু আধটু দেখবেন। পাচ দিন বসে বসে মুড়ি চানাচুর নিয়ে পুরা টেস্ট খেলা দেখার কি দরকার? পুরা খেলা না দেখে হয়তো হাইলাইটস দেখলেন। বছরে দুই একবার মাঠে গিয়ে খেলা দেখলেন। অনেকটা পিকনিকে যাওয়ার মতো। কিন্তু সবদেশের সব খেলা দেখার কি দরকার? ওমুক দেশের তমুক খেলোয়াড় কি করেছে সেটা জেনে আপনার কি লাভ? আপনি দেখবেন ওদের খেলা আর ওরা খেলবে আপনার জীবন নিয়ে খেলা।
অনেক সময় আপনি সঠিক পথে থাকলেও আপনারে জোর করে আপনার লক্ষ্য থেকে দুরে সরায় দিবে। আপনি যেটা ডিজার্ভ করেন সেটা অন্য কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে। তখন আপনার কষ্ট লাগবে কিন্তু সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে আবার নামতে হবে। কয়দিন আগে ওয়ার্ল্ডকাপে একজন প্লেয়ারকে পিছন থেকে কিক মেরে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিছে, তার কোনো দোষ ছিলো না তারপরেও তার স্বপ্ন থেকে তাকে ছিটকে ফেলা হইছে। তাই বলে কি সে খেলা ছেড়ে দিবে। তারপর তার টিম সেমিফাইনালে সবচেয়ে লজ্জাজনক ভাবে হেরেছে। এখন সেই টিম যদি খেলা ছেড়ে দেয় তাইলে আর কোনদিন ওয়ার্ল্ডকাপ জিততে পারবে না। সবভুলে গিয়ে নেক্সট ওয়ার্ল্ডকাপে তাদের নব্য উদ্যমে শুরু করতে হবে। আপনার জীবনে এমন লজ্জাজনক আর হতাশার টাইম আসবে। If you really want to be crowned when someone knock you down, you can't stay in the ground. আপনাকে কত জোরে কিক মারছে সেটা ইম্পর্টান্ট না। ইম্পর্টান্ট হচ্ছে আপনি কত জোরে কিক ব্যাক করছেন। উইনস্টন চার্চিল বলেছেন "Success is the ability to go from failure to failure without losing your enthusiasm."
আমাদের অবস্থা হচ্ছে নিজেরেতো নিজে সাহস দিতে পারিই না বরং অন্যেরে সফলতার এমন সব ছুতা বের করি যাতে নিজেরে আরো ঘুটিয়ে রাখা যায়। ও তো আগে থেকে টাকা জমায় রাখছে। তারতো শ্বশুরের পলিটিক্যাল পাওয়ার ছিলো, চ্যালাপ্যালা এসে তালা অর্ধেক ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। ওতো ৩ বছর আগে থেকে হ্যাকস' (hacksaw) ব্লেড দিয়ে তালা কাটা শুরু করছে, এখন অর্ধেকের বেশী কেটে ফেলছে। এখন শুরু করলে তো ওর সাথে পারবো না। আজকে কিছু লোক আপনার কাছ থেকে আগায় থাকবে সেটা বাপের টাকা বা গড গিফটেড ট্যালেন্ট দিয়ে, তবে কালকে তারা আগায় থাকবে কিনা সেটার সিদ্ধান্ত নিবেন আপনি। you cant change your past but u can change your future. দুই তিন বার ট্রাই করার পর ছেড়ে দিলে আপনার পরিচয় হবে লুজার। আর যারা লুজার হিসেবে নিজেরে মেনে নেন তাদের সাকসেস হবার কোনো কারণ নাই। থমাস এডিসন বলেছেন, “Many of life's failures are people who did not realize how close they were to success when they gave up.”
সাকসেসফুল হবার একটাই কারণ হচ্ছে চেষ্টা। এক বা দুইবার নয় বরং হাজার হাজারবার চেষ্টা। সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা। একেবারে শেষ দেখে নেবার চেষ্টা। যতবার ব্যর্থতা আসবে ততবার সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার শুরু করার চেষ্টা। এক বা দুইবার নয় হাজার হাজার বার ট্রাই করার পর যিনি ইলেকট্রিক বাল্ব আবিস্কার করছেন, তিনি বলেছেন, “I have not failed. I've just found 10,000 ways that won't work.” সো, "বারে বারে লাথি দিলে তালা ঠিকই ভাঙ্গবে, স্বপ্নের দরজাটা একদিন খুলবে।"
হুট হাট করে মাঝে মধ্যে লেখা আসবে
যদি লোকসম্মুখে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে বা উপদেশ, বকাঝকা, গালাগালি, হুমকি দিতে সংকোচ লাগে তাইলে ইমেইল করে দেন [email protected]