ফেলটুস স্টুডেন্টদের ক্যারিয়ার

Enjoy Study to achieve life

Student life Motivation

জিপিএ ভালো হইলে ভালো। তবে জীবনে সফল হওয়ার জন্য জিপিএ একমাত্র অবলম্বন না। ভার্সিটি লাইফের সব সাবজেক্ট ভালো করে পড়লে, খুঁটিনাটি বুঝলে ভালো। তবে না বুঝলেও তোমার জন্য সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে না।

ধরলাম তুমি ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট এবং তোমার জিপিএ জঘন্য। ২.৭৫ এর কাছাকাছি। গত চার বছরের তিন-চারটা সাবজেক্টের নাম ছাড়া ভিতরের কিছুই বলতে পারবা না। এই অবস্থাতে তোমাকে কেউ চাকরি দিবে বলে তোমার মনে হচ্ছে না। অথচ সংসারের হাল ধরার জন্য তোমার বাবা-মা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়জনকে অন্য কোথাও বিয়ে দেয়ার জন্য তার ফ্যামিলি প্রেসার দিচ্ছে। সবকিছু একসাথে তোমার উপরে এসে তোমার অবস্থা কেরোসিন বানিয়ে ফেলছে। এই মুহূর্তে তুমি কি করবে?

১. প্রথমেই খেয়াল করে দেখো- তোমার আগের বছরে বা তার আগের বছরে যারা পাশ করে গেছে। তারা সবাই কি চাকরি পাইছে? ভালো হোক, খারাপ হোক। চাকরি তো পাইছে? তাদের মধ্যে মিনিমাম ২০% পোলাপানের জিপিএ এবং পড়ালেখার কন্ডিশন তোমার মতোই ছিলো। তো, সেইসব ফেলটুস ভাইয়া-আপুরা যদি চাকরি জোগাড় করতে পারে। তুমিও পারবে।

২. শুরুতেই তোমাকে একটু এক্সপ্লোর করা। তিন-চার ঘন্টা সময় দিতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে তোমার আগের ব্যাচের ফেলটুস ভাইয়া-আপুরা কে কই কই চাকরি করতেছে। কি নিয়ে কাজ করতেছে। তুমি নিজে নিজে সব খোঁজখবর বের করতে না পারলে, দুই-চারজন সিনিয়রের সাথে কথা বলো। তোমার টার্গেট হবে এমন একটা সেক্টর বা এমন একটা জব টাইপ ইডেন্টিফাই করা যেটাতে তোমার আগের ব্যাচের ফেলটুসরা চাকরি করে ।

৩. তোমার সিনিয়ররা কোন টাইপের চাকরি বেশি করে খোঁজ নিতে গেলে, তুমি অবাক হয়ে যাবা। সিএসই, ইলেক্ট্রিক্যাল, বিবিএ, জার্নালিজম এর মতো অল্প কয়েকটা সাবজেক্ট বাদ দিলে, বেশিরভাগ সাবজেক্টের মানুষই তার লাইন বাদ দিয়ে অন্য লাইনে চাকরি করে। এতে আপসেট হওয়ার কিছু নাই। তোমার সিনিয়ররা যেহেতু করতে পারতেছে, তুমিও দরকার হলে অন্য লাইনে যেতে পারবে। জাস্ট সিম্পল একটা একশন প্ল্যান ডেভেলপ করতে হবে।

৪. যে লাইনে তোমার সিনিয়ররা বেশি কাজ করে সেটা যদি তোমার ডিপার্টমেন্টের কোন সাবজেক্ট হয় তাহলে জুনিয়র কারো কাছ থেকে সেই সাবজেক্টের বইখাতা-নোটপত্র জোগাড় করো। তারপর এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার আগে যেভাবে সিরিয়াসলি পড়ছিলা সেই স্টাইলে সিরিয়াসলি দেড় মাস পড়বা। এই সাবজেক্টের টপিকগুলা জুনিয়র পোলাপান বা ক্লাসমেটদের বুঝানোর চেষ্টা করবা। শুনতে না চাইলেও জোর করে শুনাবা। যা আছে সব কিছু ভাজা ভাজা করে ফেলবা।

আর যে লাইনে তোমার সিনিয়ররা বেশি কাজ করে সেটা অন্য ডিপার্টমেন্টের সাবজেক্ট হইলে। সেই অন্য লাইনটা- প্রোগ্রামিং, সাংবাদিকতা, সেলস/মার্কেটিং, গার্মেন্টস বা ব্যাংক হওয়ার চান্স বেশি। তাইলে সেই সাবজেক্টের জিনিস অনলাইনে ভুঁড়ি ভুঁড়ি পাওয়া যাবে। সেইটার প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করতে হবে। সপ্তাহে তিন বা চারদিন প্রিপারেশন নেয়ার জন্য আত্ম-দিবস পালন করো। ২০১৬ এর শেষ শুক্রবারে আখেরি মওকা দিবস করো। দরজা বন্ধ করে এইটা নিয়ে পড়ে থাকো দেড় মাস।

৫. দেড় মাস প্রিপারেশনের টাইমের পরে সেই সব সিনিয়রদের সাথে কথা বলতে হবে। কি কি শিখছো জানাও। আর কি কি করে জানতে হবে জিজ্ঞেস করো। উনারা যা যা বলবে সেগুলা বাসায় এসে জানার চেষ্টা করবে। এতে তোমার ব্যাপারে একটা পজিটিভ ধারণা ডেভেলপ করে নিবে। তার পাশাপাশি লাস্টের দিনগুলাতে হুট করে ডিপার্টমেন্টে একটিভ হয়ে যেতে হবে। কোন ফোরাম বা গ্রুপে গঠনমূলক কমেন্ট বা সাজেশন দিবে। অন্যদের হেল্প করার মতো লিংক পোষ্ট দিবা। যাতে টিচার, ক্লাসমেট, সিনিয়ররা অবাক হয়ে যায়। এই ছেলে বা এই মেয়ে দেখি এখন ডেডিকেডেটলি কাজ করে। সবকিছুতে সিনসিয়ার হয়ে গেছে।

৬. বিশ্বাস করো বা নাই করো- ইন্টারভিউ দেয়ার আগেই বেশিরভাগ চাকরি হয়ে যায়। তোমার সিনসিয়ারিটি, সিরিয়াসনেস আর একটিভনেস দেখে কোন সিনিয়র তার অফিসে কোন ওপেনিং এ তোমাকে রিকমেন্ড করলে। বা কোন টিচারের কাছে ভালো কেউ আছে কিনা জানতে চাইলে, সেই টিচার যদি তোমার নাম বলে দেয়, তোমার চাকরি ৯০% কনফার্ম হয়ে যায়।

৭. এর মধ্যে ভালো করে একটা সিভি বানাতে হবে। সিনিয়র ভাইদের ইন্টারভিউতে কি কি প্রশ্ন করছিলো সেগুলা শুনে নিজে নিজে প্রিপারেশন নিতে হবে। প্রতিদিন তিন-চার ঘন্টা করে দুই-তিন সপ্তাহ প্রিপারেশন একটা লেভেল দাঁড়িয়ে যাবে। আর কোথাও ইন্টারভিউ দিতে গেলে যেগুলা পারবা না, সেগুলা বাসায় এসে ভালো করে শিখার চেষ্টা করবে। মাঝেমধ্যে তোমার প্রিয়জনকে আপডেট দিবে। কি করতেছো,কেন করিতেছো।

৮. নিজেকে ঘুরানোর জন্য খুব বেশি সময় লাগে না। তিন থেকে চার মাস সিনসিয়ার থাকলেই যথেষ্ট। সারা জীবন যত ফাঁকিবাজি করছো। সেটা এই কয়দিনের জন্য ভুলে গেলে, তুমি খুব সহজেই চমকে দিতে পারবে। তাই এই কয়দিন আলতু ফালতু কাজে সময় নষ্ট করবা না।

৯. আর তোমার ফাইনাল পরীক্ষার নিয়ে টেনশন করার কিচ্ছু নাই। তুমি যেই লেভেলের স্টুডেন্ট সেই লেভেলটা ধরে রাখার জন্য প্রতিদিন ষোল ঘন্টা করে পড়ালেখা করা লাগে না। ডেইলি দুই থেকে তিন ঘন্টা পড়বা। আর পরীক্ষা কাছাকাছি চলে আসলে তখন একটু বেশি করে সময় দিবা।

১০. চেষ্টা করবা পাশ করে বের হওয়ার সময় যাতে মিনিমাম ২০-৩০ হাজার টাকা তোমার পকেটে জমা থাকে। কারণ ব্যাচেলর হিসেবে বাসা ভাড়া দিতে, মেসে খাইতে অনেক খরচ বেড়ে যায়। তাছাড়া ইন্টারভিউ এর জন্য ভালো জামা, প্যান্ট জুতা কিনতেও খরচ হবে। চাকরি পাইলে বন্ধুদের পার্টি দিতেও টাকা লাগবে।

মনে রাখবে যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্বাস আছে, ততক্ষণ সুযোগের শেষ বলে কিছু নাই।

সঙ্গেই থাকুন::

হুট হাট করে মাঝে মধ্যে লেখা আসবে


FB post




Question or Feedback:

যদি লোকসম্মুখে প্রশ্ন জিগ্গেস করতে বা উপদেশ, বকাঝকা, গালাগালি, হুমকি দিতে সংকোচ লাগে তাইলে ইমেইল করে দেন [email protected]