No college wants me - Struggle

Just another Dude.

স্ট্রাগল, টু বি কন্টিনিউড

এসএসসি রেজাল্ট::

বহুকাল আগে, এসএসসি পরীক্ষায় ষ্টার মার্কস বাংলালিঙ্কের দামে পাওয়া যেতো। আইজকাইলকার চেংড়াপুলাপানের জিপিএ ৫ পাওয়ার মতো। কিন্তু আমি সেটা পাইনি। আমার এসএসসি এর রেজাল্ট ছিলো ফার্স্ট ডিভিশন-এক বিষয়ে লেটার। প্রিয় সাবজেক্ট, ফিজিক্স অবজেক্টিভে ১৬, আর ২/৩ মার্কস কম পাইলে ফেল করতাম। ১১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৫০ নম্বর পাইলে তারে ষ্টার বলতো আর কোনো সাবজেক্টে ৮০ এর উপর পাইলে তারে লেটার বলতো। সেই রেজাল্ট দিয়ে নটরডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, ইনফ্যাক্ট ঢাকার মোটামুটি মানের কোন কলেজেরই ভর্তি পরীক্ষা দেয়া তো দূরে থাক, ভর্তির ফর্মই কিনতে পারলাম না। ছোটবেলায় খুব শখ ছিলো, ক্যাডেট কলেজে পড়ার। আর কিছু না হোক জিলা স্কুল বা থানার পাইলট স্কুলে। কোনোটাই হয়নি।

ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন::

তাই, ফকফকা সাদা রংয়ের, ৪০ কেজির একটা চালের বস্তার ভিত্রে বই খাতা, জামা কাপড়, যা ছিলো সব ঢুকাইছি। পারলে আমি নিজেরেও ঢুকাইয়া ফেলি, এরাম অবস্থা। বস্তাটা মাথায় নিয়ে, ঢাকায়, মামার বাসার উল্টা দিকে রাস্তা পার হয়ে, বাসাটার দিকে আরেকবার তাকালাম। গ্রাম থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আসা ছেলেটির নটরডেম কলেজে ভর্তি হবার স্বপ্নখানি ভেঙ্গেচুড়ে গিয়েও, গুড়াগুড়া অংশগুলা কেনো জানি বাতাসে দ্রবীভূত হতে পারতেছিলো না। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সাথে অস্ফুস্ট চোখের জল মিশিয়ে, সফেদ বস্তাখানরে কখনো মাথায়, কখনো বগলের তলে নিয়ে, ডাক মারা ব্যাটসম্যানের মতো, যাত্রা শুরু করলাম। ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন।

কোন কলেজে ভর্তি হবো? ::

প্যাভিলিয়নে ফিরতে না ফিরতেই, শুভাকাঙ্ক্ষীরা গিজ গিজ করতে লাগলো। হেগো, খাইয়া দাইয়া কোন কাজ কাম নাই, খালি টিপ্পনি কাটে, অমুকে, বোম্বল মার্কা স্টুডেন্ট, রোল নং দশের বাইরে সেও ফার্স্ট ডিভিশন দুই বিষয়ে লেটার পাইছে। আগে শুনছিলাম, এ ভালো স্টুডেন্ট। এখন দেহি নষ্ট হয়ে গেছে গা। আফসোস। বাপে কত কষ্ট করে সংসার চালায়। ছেলেপুলে তার মর্ম বুঝলো না। আবার কেউ কেউ এসে ফ্রি বুদ্ধি দেয়, পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে উমুকে ফাঠালাইছে। আম্মু আর আপুরা মোটামুটি ডিসাইডেড, যে আমি আরেকবার পরীক্ষা দিচ্ছি। শুধু বাগড়া দিলেন আব্বু। বল্লো, "যে পারে, সে হোচট খেয়েই দাড়াতে পারে। আর যে পারে না, সে এক জায়গায় বার বার হোচট খায়।" তারপর আব্বুকে সবার প্রশ্ন, তাইলে এখন কোন কলেজে ভর্তি হবো? এইটার উত্তর কেউ জানে না।

সায়েন্সে মিনিমাম ষ্টার মার্কস::

আমার আপু আন্ডারগ্র্যাড করার টাইমে, হলে উনার পাশের রুমে এক আপু ছিলেন। উনি কুমিল্লার এক কলেজের নামে গ্বল্প করতেছিলেন, জুরানপুর টাইপের কিছু একটা নাম হবে। কিন্তু ঐটা কোন জায়গায়, তা আমার আপু জানে না। আমি উঠলাম পাবলিক বাসে, কলেজ খোঁজার জন্য। একজন বলল যাত্রাবাড়িতে, জুরাইন নামে একটা জায়গা আছে। কিন্তু ঐখানে গেলাম না। কারণ, আপু বলছে, কলেজ কুমিল্লায়। বাসের মধ্যে একে-ওকে জিগ্যেস করি। কোন লাভ হয় না। শেষমেশ এসে নামলাম, কুমিল্লা বিশ্বরোডে। ঐখানে অনেক জনরে জিগ্যেস করার পর, লাস্টে এক ট্রাফিক পুলিশ বল্লো, গৌরীপুরের দিকে এরাম একখান কলেজ আছে কিন্তু ঐদিকে এখন বন্যা হচ্ছে। আর যাইতে হইলে এইখান থেকে কুমিল্লা ক্যান্টরমেন্ট যান, তারপরে পাপিয়া বাস। বাসের মধ্যে আবার জিগ্যেস করতে থাকলাম। শেষমেশ গৌরীপুর নামার পর একজন বল্লো, একটা কলেজ আছে জুরানপুর কিন্তু ঐখানে পানি। যাওয়া যাবে না। কিন্তু আমি ফিরে যাবার পাত্র না। দর্কার হইলে সাঁতরিয়ে যাবো। যদিও সাঁতার ভালো পারিনা। আগাইতে আগাইতে শহীদনগর এসে নামলাম। তারপর টেম্পুতে করে ৪টার দিকে গিয়ে কলেজে পৌছলাম। অজপাড়ার মাঝে হইলেও জায়গাটা বেসম্ভব সুন্দর। একজন মেজর জেনারেল কলেজটা করছে। কলেজে গিয়ে, ভর্তির ফর্ম চাইলাম, কিন্তু আমারে দিবে না। কারণ সায়েন্সে মিনিমাম ষ্টার মার্কস, এইখানেও। আমারে বল্লো তুমি আর্টস বা কমার্সের ফর্ম নিতে পারো। কিন্তু সায়েন্সের হবে না। মাথায় হাত। অলমোস্ট অফিসের সামনে ফ্লোরে বসে পড়তে নিছিলাম। এখন বাসায় ফিরে গেলে আবার আমাকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে হবে।

ভারী পানি::

আমি আবেগে নয়, হতাশায় আর ব্যর্থতায় কাইন্দালছি টাইপ অবস্থা। এই সময় রান্ডম একজন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো, "কি হইছে, তোমার?" বল্লাম, আমাকে ফর্ম দিচ্ছে না। উনি সব শুনে বল্লো, ষ্টার মার্কস এর নিচে তো ফর্ম দেয়া হবে না। সেটাই নিয়ম। আমি বল্লাম, স্যার আমি ভালো স্টুডেন্ট। সামহাউ রেজাল্ট খারাপ হইসে। উনি আমাকে টিচারদের রুমে নিয়ে, কেমিস্ট্রি স্যার, এনামুল হকের কাছে নিয়ে গেলেন। এনামুল হক স্যার আমাকে পানির রাসায়নিক সংকেত জিগ্যেস করলেন। আমি, বল্লাম পানির সংকেত, H2O আর ভারী পানির সংকেত D2O2। উনি বল্লেন বাহ তুমি ভারী পানির সংকেত জানো। উনি আরো কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। তারপর ঐখানে ফিজিক্স স্যার ছিলেন, উনিও কিছু প্রশ্ন করছিলেন। আরো কয়েকজনের প্রশ্নের উত্তর দেবার পর। ঐ যিনি আমাকে টিচার্স রুমে আনছেন। পরে জেনেছি উনার নাম, শাহ আলম স্যার। উনি প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে নিয়ে গেলেন। প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ইংরেজি কিছু ট্রান্সলেশন জিগ্যেস করলেন, মোস্টলি প্রবাদবাক্য। আমি উত্তর দিলাম। উনি শেষ পর্যন্ত আমাকে একটা ফর্ম দিলেন। যদি আমি ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ তে ৭০ এর উপর নম্বর পাই তাইলে আমাকে ভর্তি করাবে। কয়েক সপ্তাহ পরে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে, ঐদিনের ভর্তি পরীক্ষার ঝড়ে খালি বক না, হাতি ভল্লুক ছানাও মরে গিয়ে, আমি ফার্স্ট হয়ে গেলাম।

ফিজিক্সে ৭৫ এ ৭৪::

জুরানপুর কলেজে, সেই ব্যাচে, এসএসসিতে ৮৮১ নম্বর পাওয়া পোলাপানও ছিলো। ৮৪০ এর উপরে ছিল ১৯ জন। আমার ছিলো ৭২৭ মার্কস। আমার ব্যাচে এসএসসি এর নম্বরে, আমি লাস্ট থেকে দ্বিতীয়। প্রথম ক্লাস টেস্টে, ফিজিক্সে ১০ এ পাইছি ৩। আমার সমান আর একজন পাইছিলো। ম্যাক্সিমাম পোলপান পাইছে ১০ বা ৯। প্রচুর ট্যালেন্টেড পোলাপান ছিলো। আমার আশেপাশেই কমপক্ষে ৮/১০ ছিলো। কিন্তু পরিশ্রম, সাধনা, হাল্কা আনসোসাল হয়ে মাস্তির পরিমান কমিয়ে, বিকেলে ঘুরতে বের না হয়ে পড়তাম। শেষপর্যন্ত, আমি ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার, এমনকি টেস্টে ফার্স্ট ছিলাম। ফাস্ট ইয়ার ফাইনালে, ফিজিক্সে ৭৫ এ ৭৪ পাই। সেই শাহ আলম স্যার, আমাকে ফ্রি প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। একটা টিউশনিও জোগাড় করে দিছিলেন। হলের মধ্যে থাকা-খাওয়া, কলেজের বেতন, এমনকি বইও ফ্রি পাইছিলাম। পুরো ইন্টারমিডিয়েট পড়তে বাসা থেকে সর্বমোট ৩২০০ টাকা নেওয়া লাগছে। অথচ সেই শাহ আলম স্যারকে, অথবা কেমিস্ট্রির এনামুল হক স্যার, ম্যাথের রইস স্যার, ফিজিক্সের পাটোয়ারী স্যার বা বাংলার মুনিরুজ্জামান স্যারকে থাঙ্কু বলা হয় নাই এখনো।

থাঙ্কু, ফর হেল্পিং ::

জানি, ধন্যবাদের পাবার আশায় দেশের লাখ লাখ টিচার হা করে বসে থাকেন না। শুধু জ্ঞানের আলো দিয়ে উনারা হাতি ঘোড়া তৈরী করেন না। মাঝে মধ্যে, আমার মতো মশা মাছিরে থাপ্পর না দিয়ে, একটু রক্ত খাইতে দিয়ে, আলোর পথ দেখান। তাই, একদিন সামনে দাড়িয়ে বলতে হবে, থাঙ্কু, ফর হেল্পিং এ রান্ডম কিড।


FB post