সেকেন্ড টাইম এডমিশন টেস্ট

নির্বাচিত প্রশ্ন - ৪

নির্বাচিত প্রশ্নের মূল পেইজ

প্রশ্ন::

আমি HSC '14 ব্যাচ এর ছাত্র। আমি প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং এ ভরতি হয়েছিলাম। মাঝে আর্মি তে টিকে যাই আর Issb এর জন্য নির্বাচিত হই। ISSB তে ৪ দিনের মধ্যে আমার ভাইবা খারাপ হয় আর আমি ফাইনাল সিলেকশন এ বাদ পরি। এদিকে বাসায় এসে আমি জন্ডিসে আক্রান্ত হই আর এজন্য কোচিং এ যেতে পারিনি। সুস্থ হবার পর সব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। হয়তো উতসাহ হারিয়ে ফেলায় পরীক্ষা খারাপ দিতে থাকি। সবায় বলে, ভাগ্যে নেই। বাবা মার মুখের দিকে তাকিয়ে খুব কস্ট হয়। আমি একমাত্র ছেলে।মা ইদানিং খুব অসুস্থ। কোথাও ভরতি হতে পারিনি। কাজে আগের মত আর উদ্যম পাচ্ছি না স্যার।বাবা মা অনেক আশা নিয়ে ঢাকা পাঠিয়েছিল। বাসায় প্রতি মুহূর্ত অসস্তি তে ভুগি।

আমার উত্তর::

এইসব ক্ষেত্রে, আব্বু-আম্মুর মন খারাপ, গার্লফ্রেন্ডের মুখ ভার, অন্যদের টিটকারি বা এড়িয়ে চলা, ফোনের রিপ্লাই না পাওয়া, জন্ডিস, কোনটাই কোনো ব্যাপার না। ব্যাপার হচ্ছেন আপনি। আপনি ভর্তি হইতে পারেন নাই, আপনার উদ্যম, উৎসাহ কমে গেছে। না, এইভাবে বলবেন না। বরং বলেন, স্বীকার করেন, আপনি আপনার উদ্যম কমাইছেন। কমে যেতে দিছেন। আপনি ISSB তে চারদিনে বাদ পড়ছেন, সেটা নেগেটিভলি দেখছেন। কিন্তু চারদিন পর্যন্ত যে যেতে পারছেন, সেটা পজিটিভলি দেখেন নাই। সেটা আপনার ভুল হইছে। যেখানে, আপনার চিন্তা করা উচিত ছিলো, আমি যেহেতু চারদিন পর্যন্ত যাইতে পারছি, আমি ভর্তি পরীক্ষাতে ও পারবো। আপনি সেটা করেন নাই। সেটা আপনার দায়। সেই দায় স্বীকার করেন। পাশ কাটানোর চেষ্টা করবেন না।

তবে, এখনো ভেবে দেখলে, পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে যাওয়ার অনেক কারণ আছে, আপনি জাস্ট সেগুলারে পজিটিভলি দেখার চেষ্টা করেন। আপনি হালকা হইলেও ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিছেন এবং কয়েকটাতে ভর্তি পরীক্ষাও দিছেন। তারমানে, আপনি জানেন কি টাইপের প্রশ্ন হয়। পরীক্ষা কেমন হয়। আবার পরেরবার যারা ফ্রেশ বের হয়ে আসবে তাদের চাইতে আপনি ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে বেশি সময় পাচ্ছেন। ওরা যেগুলা এখন নতুন করে শিখতেছে, আপনি অলরেডি সেগুলা পড়ে ফেলছেন। ভর্তি পরীক্ষার আগে হালকা রিভাইজ ও দিছেন।

বি কেয়ারফুল। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক অনেক, আমার মনে হয় ৯৫% পোলাপান সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিতে গেলে, লাড্ডু মারে।

কেনো মারে, সেটার কারণ খুবই সিম্পল। লম্বা সময় পাইলে, শুরু করতে করতেই অনেক দিন চলে যায়। একদিন পড়লে, পাচ দিন খবর থাকে না। দেড় দুই মাস গেলে মনে হয়, পরের সপ্তাহ থেকে একদম নতুন ভাবে শুরু করবো। দুই দিন পরে সেটাও ঠিকে না। এইভাবে টাইম চলে যায়। ধীরে ধীরে একটা ভয় মনের মধ্যে ঢুকে যায়। এইবার যদি না পারি। এইবারই তো শেষ চান্স। সেই ভয়ের কারণে পড়তে বসলে মন টিকে না। কোচিং এ ভর্তি হইলেও, কারেন্ট ব্যাচের পোলাপানের সাথে মিলায় নিতে লজ্জা লাগে এবং ফলশ্রুতিতে, আগের চাইতে খারাপ কন্ডিশনে পড়ে যান। ভিতরে ফ্রাসস্টেশনের সাইজ ক্রমশই বাড়তে থাকে।

দেখেন, নতুন যারা পাশ করবে। তারা যদি এইবার পড়ে চান্স পাইতে পারে। আপনি কেনো পাবেন না ? আপনারেতো আর ব্রিজের তলা থেকে কুড়ায় আনে নাই।

সো, আপনাকে প্রিটেন্ড করতে হবে। নিজে নিজে ঠিক করতে, এক মাস পরে ভর্তি পরীক্ষা। প্রতিমাসের ২৮ তারিখ পরীক্ষা। এখন আর বেশি দিন সময় নাই। তাই, চার সপ্তাহের মধ্যে প্রিপারেশন নিতে হবে। দ্রুত বই খাতা বের করে প্রিপারেশন নেয়া শুরু করে দেন। একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, সব সাবজেক্টের কিন্তু প্রিপারেশন নিতে হবে। হয়তো জানুয়ারি মাসের যেই ভর্তি পরীক্ষা (আপনি নিজে নিজে ঠিক করেছেন), সেটার জন্য ফিজিক্সের সব চ্যাপ্টার ভাজা ভাজা করতে যাবেন না। খালি ফার্স্ট পেপারের প্রথম দশ চ্যাপ্টার। পরের মাসে, প্রথম পত্রের বাকি চ্যাপ্টার। এইভাবে যদি নিজেরে বোকা বানিয়ে বানিয়ে, কৃত্রিম প্রেশার তৈরি করতে পারলে, দুই মাস পরে নিজেই টের পাবেন, কতটুকু পরিবর্তন হইছে। কনফিডেন্স লেভেল হাই হয়ে গেছে। আপনার আব্বুর মনের কষ্ট, আম্মুর মুখের হাসি নিয়ে টেনশন করা লাগবে না। যদি সেটা ফিরিয়ে আনার হেডম থাকে, একদিন ঠিকই ফেরত আনতে পারবেন, আপনার কাজের দ্বারা। চিন্তা বা হতাশা করে, শুধু উনাদের যন্ত্রণা আরো বাড়াবেন। আর কোন লাভ হবে না।


FB post