Study smart for excellent result.
পড়ালেখা করতে গেলে, চেয়ারের সাথে সুপার গ্লু মেখে, ঘন্টার পর ঘন্টা বই খুলে বসে থাকলেও এক লাইনও পড়া হয় না। কেনো হয়না, সেটা নিয়ে হায় হুতাশ করলেও, চিন্তা করে দেখি না কেনো হয় না। দুত্তরীকা, পড়ালেখা হচ্ছে না বলে ফেইসবুক খুলে বসি। কেনো যে, পড়া লেখা হয় না, তার আসল কারণ খুঁজে খুঁজে আমিও দিশেহারা। তবে কয়েকটা জিনিস ট্রাই করে দেখতে পারেন।
১. এক্সচেইঞ্জ আলসেমি
২. ডিসকানেক্ট
৩. রিডিউস ডিস্ট্রাকশন
৪. এড ভেরিয়েশন
৫. চেঞ্জ লোকেশন
১. আলসেমি আপনাকে করতেই হবে। আলসেমি না করে নিস্তার নাই। তাই কয়েকটা জিনিস দিয়ে আলসেমিকে আর্টের লেভেলে নিয়ে যাবেন। যেমন, আমি যখন কলেজে পড়তাম। আমার বিছানা থেকে রুমের লাইট সুইসের দূরুত্ব ছিলো, দশ - বারো হাত। উঠে গিয়ে ফ্যান বা লাইটের সুইস অন-অফ করতে আলসেমি লাগতো। বুদ্ধি বের করলাম। হোস্টেলের পিছনে কলেজ কতৃপক্ষ গাছ লাগাইছে। গাছের সাথে চিকন লম্বা বাশ দিছিলো, গাছ সোজা রাখার জন্য। একটা গাছ মরে গেছে, আমি সেই বাশ রুমে এনে বেডের নিচে রেখে দিয়েছি। যখন লাইট অন-অফ করা লাগতো, বাশ দিয়ে সুইস অন-অফ করতাম। প্রথম প্রথম অতো ভালো পারতাম না, কয়েকদিন ট্রাই করার পরে দক্ষ হয়ে গেছি। এইরকম কত হাজার হাজার আলসেমি যে আমি করি, বলে শেষ করা যাবে না। এখন, মার্কিন মুল্লুকে বাশ খুঁজে পাই নাই, তবে আলসেমি ছাড়ি নাই। ভোরে ঘুম ভাঙ্গলে, আলসেমি করে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালাই না। বেডের পাশে, টেবিলের নিচে, একটা টেবিল ল্যাম্প আছে। সেটা জ্বালিয়ে কাজ শুরু করে দেই। বা রাতে ঘুমানোর আগে, একচুয়েলি চোখ বন্ধ করার আগে, রুমের লাইট অফ করে দিয়ে, ল্যাম্পের আলোতে বই খুলে পড়ার চেষ্টা করি। বই খুল্লে, মাশাল্লাহ, ঘুম মামা যেখানেই থাকুক না কেনো, মামা রকেটের বেগে ছুটে আসেন।
মোবাইলের চার্জার এর মাথা সব সময় টেবিলের নীচে পড়ে যায়। কষ্ট করে খুঁজে বের করা লাগে বা অন্য তারের সাথে প্যাচ লেগে যায়। সেজন্য আমি পেপার বাইন্ডারের সাদা ক্লিপের মধ্যে দিয়ে চার্জারের মাথা এনে, বাইন্ডার টেবিলের সাথে আটকিয়ে দিয়েছি। এখন আর চার্জারের মাথা নিচে পড়ে যায় না। খুঁজে বের করতেও কষ্ট না হয় (লাইফ হ্যাক নাম এক সাইটে এই আইডিয়া পাইছি)। আপনি স্কচটেপ দিয়েও চার্জারের এক প্রান্ত টেবিলের সাইডে লাগায় রাখতে পারেন। আবার মাস্টার্স এর থিসিস লেখার সময়, চিপস এবং দুই লিটার মাউন্টেন ডিউ এর বোতল টেবিলের পাশে রাখতাম। যাতে নিচে নেমে খাবার নিয়ে আসতে না হয়। খাওয়া আর ঘুম ভালো মতো হইলে, পড়ালেখা কোনো ব্যাপারস না।
সো, আলসেমিটা আশেপাশের জিনিসে ট্রান্সফার করেন। এইসব আলসেমির এন্টারটেইনমেন্ট, পড়ালেখা করার শক্তি বা মনোযোগের রিফুয়েলিং করবে।
২. যত বেশি কানেক্টেড থাকবেন তত সমস্যা। অনেকসময় ল্যাপটপ শাট ডাউন করে দিলেও, আবার নেশার বাতিক উঠে এবং অন করে ফেলেন। কয়েকদিন তো আমি ল্যাপটপের ব্যাটারি খুলে ফেলছিলাম অন্য রুমে রেখে দিছিলাম এবং জোর করে মোবাইল অফ করে রাখছিলাম। মোবাইল ৫ মিনিট অফ করে রাখলে মনের ভিতর খচখচ করে, এই বুঝি জরুরি কেউ ফোন দিলো। কিন্তু সেটা ৫ ঘন্টা অন করে রাখলেও কেউ মিস কলও দেয় না। যদিও ফোন আসে না, তবুও মন মানে না। যত বেশি ইন্টারনেটের সঙ্গে থাকবেন, তত বেশি সময় অপচয় হবে। তাই, মোবাইলের বা ল্যাপটপের wifi বন্ধ করে রাখেন। নিতান্ত দরকার হইলে wifi চোরের মত অন, দুইটা সুন্দরী মেয়েরে add রিকোয়েস্ট সেন্ড করে আবার wifi অফ করে দেন। তবে একজনরে, রিকোয়েস্ট ক্যানসেল করে একদিনে সত্তর বার পাঠাবেন না। ব্লক মেরে দিবে।
৩. ডিস্ট্রাকশন দুইভাবে হয়। এক হয় ইলেকট্রনিক্স যেমন, ল্যাপটপ, মোবাইল, টিভি, খেলা দিয়ে আর হয় অন্য সব জিনিস দিয়ে। যেমন, পাশের রুমে কাজিনরা ইয়া ডিসুমাই ডিসুমাই আড্ডা মারতেছে। কোনো ফ্রেন্ডের খেয়েদেয়ে কাজ কাম নাই, খোশগল্প করতে চায়। বা পাশের বাসার আন্টি আসছে, উনি কিভাবে দইবড়া ফার্স্ট টাইম এক্সপেরিমেন্ট করে তার হাবি -এর পেট খারাপ করায় ফেলছে সেই কাহিনী, ষ্টারপ্লাসের কুলসুম এর কাহিনীর চাইতেও লম্বা করে টেনেটুনে বলতেছে। এইসব ক্ষেত্রে পানি খাবো বা বাথরুমে যাবো বা মোবাইলে কাউরে ফোন দিবার স্টাইলে উঠে গিয়ে হারায় যাইতে হবে। ডিস্ট্রাকশন কারীরা যদি বেশি গেঞ্জাম করলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। আর অন্যদিকে রুমের মধ্যে ডিস্ট্রাকশন করার জিনিস পত্র কম রাখতে হবে। কি কি জিনিস আপনারে ডিস্ট্রাক্ট করে, আপনি সহজেই বের করতে পারেন। আর না পারলে আপনার আম্মুরে জিগ্যেস করেন।
৪. এক স্টাইলে বেশিক্ষণ পড়ালেখা করলে আপনি bored হয়ে যাবেন। তাই কখনও লিখে লিখে। কখনো অন্যকে বুঝানোর স্টাইলে। কখনো বা টিচার কিভাবে লেকচার দিছে সেটা ভেংচিয়ে ভেংচিয়ে চালায় যান। ধরেন, এখন ক্রিকেট খেলা চলতেছে, আপনি খেলা না দেখে পড়তে চাচ্ছেন, তাইলে পড়াটা ক্রিকেটের ধারাভাষ্য স্টাইলে মানে চৌধুরী জাফরউল্লা শারাফত স্টাইলে করেন না। কেউতো নিষেধ করে নাই। এইসব ভেরিয়েশন আপনাকে দীর্ঘ সময় পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
তারপর কিছুক্ষণ বসে, কিছুক্ষণ দাড়িয়ে, কিছুক্ষণ এক পায়ে দাড়িয়ে। কিছুক্ষণ শুয়ে। আবার ফ্লোরে বসে, বেডের উপড় বই পত্র রেখে। কিংবা বেডের উপর শুয়ে ফ্লোরে বই পত্র রেখে। বা টেবিলে বসে, চেয়ারে পা দিয়ে। বা টেবিলের উপর তাবলীগদের মতো ভাত খোয়ার স্টাইলে বসে। অথবা উপর দাড়িয়ে বা বেডের নিচে শুয়ে। বা বেডের উপর শুয়ে পাশের দেয়ালে কোমড় সহ শরীরের বাকি অংশ ভার্টিক্যালি রেখে। এই রকম পৌনে চারশ স্টাইলে ভেরিয়েশন আনতে পারেন। এইসব ভেরিয়েশনে কাজ হয় কিন্তু। চেস্টা করে দেখেন, বিফলে মুল্য ফেরৎ।
৫. আমার কাছে মনে হয়, একই জায়গায় চেয়ার টেবিল বেশি দিন থাকলে, কয়েকদিন পর আপনি কেমন জানি ইউজড টু হয়ে যান। এবং পড়ালেখা কম হয়। তাই এক/দুই মাস পর, চেয়ার টেবিলের পজিশন চেঞ্জ করেন। টেবিলের পজিশন চেঞ্জ না করতে পারলে, কিছুদিন টেবিলের একপাশে চেয়ার রাখবেন। কয়দিন পর অন্যপাশে রাখবেন। একরুমে পড়া না হলে, বারান্দায় বা অন্যরুমে যাবেন। বাসায় পড়া না অগ্রসর হইলে, লাইব্রেরিতে যাবেন। সেখানে না হইলে কফি শপে যাবেন। কফি শপে না হলে বাসে বা ট্রেনে করবেন। গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাওয়ার পথে পড়েন। আবার কিছু আতেল আছে, গার্লফ্রেন্ড সহ লাইব্রেরিতে পড়ালেখার ডেইট করে। এরাম প্রেমকরার চাইতে প্রেমহীন লাইফই উত্তম (আঙ্গুর ফল টক, লিচু ফলে ফরমালিন)
গত শনিবার, আমার পার্ট টাইম পিএইচডি এর জন্য, একটা ১৩ পাতার একটা রিসার্চ পেপার রিভিউ জমা দেয়ার ডেড লাইন ছিলো। আমি দেখলাম বাসায় ল্যাপটপ, মোবাইলের আশেপাশে থেকে ঘন্টাখানেক পার করেছি কিন্তু রিসার্চ পেপারের একটা প্যারাগ্রাফ পার করতে পারলাম না। বাসায় ল্যাপটপ, মোবাইল রেখে চলে গেলাম একটা চাইনিজ ক্যাফে টাইপের রেস্টুরেন্টে। তেরো পাতা পড়ে, প্রয়োজনীয় অংশ হাইলাইট এবং যা যা গুগল করা লাগবে তার শর্ট লিষ্ট করতে থাকলাম। ক্ষিদা লাগছিল মাগার পড়া শেষ না করে খাই নাই। ছোট বেলার যে নিয়ম ছিলো, আগে হোমওয়ার্ক শেষ করো তারপর ডিনার। ওখানে লাঞ্চ সেরে বাসায় এসে দেখি কেউ, ফোন/এসএমএস করেনি, কমেন্ট বা মেসেজও দেয়নি।
উপরোক্ত ঘটনায়, মিস্টার গিনিপিগ, ডিস্ট্রাকশন ডিসকানেক্ট করে, লোকেশন চেঞ্জ করেছেন। চাইনিজ রেস্টুরেন্টের চিং বিং চুং বং তাকে ডিস্ট্রাক্ট করতে পারে নাই। কারণ ঐগুলা উনার মগজ দিয়া ঢুকে নাই। আর টার্গেট হাসিল করে, চাইনিজ ফুড খেয়ে নিজেকে রিওয়ার্ডেড করেছেন। সেল্ফ রিওয়ার্ড কিভাবে আতলামিতে সাহায্য করে তা না হয় আরেকদিন জানলেন।