Just another Dude.
বুয়েটে, প্রথম যখন ক্লাস শুরু করি, তখন পোশাক হিসেবে কলেজের ড্রেসের একটা শার্ট, একটা প্যান্ট (কলেজ থেকে ফ্রি পাইছিলাম) তার সাথে দুইটা ফকিরা মার্কা জিন্স আর ৩/৪ টা টি শার্ট-ছিলো।
কদিন আবিষ্কার করলাম আমার বেডের নিচে একটা সুটকেস। আগে যে ভাইয়া ছিলেন, উনি রেখে গেছেন। প্রায় বছর দেড়েক ঐ ভাইয়ার কোনো খবর নাই। পরে শুনছি উনি চিটাংগ চলে গেছেন। আর সুটকেসে উনার দরকারী কিছু নাই। তারো কিছুদিন পরে, আমি আর আমার রুম্মেট রাকিশ ভাই মিলে সুটকেস খুললাম। দেখি ঐখানে অনেকগুলা শার্ট আছে, যেগুলা আমার সাইজের দেড় কি দুই গুন বড়। কিছু ক্যাসেট এবং একটা ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো (এখন জাদুঘরে দুই একটা থাকতে পারে)। প্রায়ই আমার পরিস্কার কিছু থাকতো না পড়ার উপযোগী (আলসেমি করে ধুইতাম না)। আর পারফিউম কিনে ব্যবহার করবো, সেই অবস্থা ছিলো না। হয়তো উচিত হয়নি, তারপরেও একদিন বাধ্য হয়ে, সুটকেস থেকে শার্ট বের করে পরা শুরু করলাম। শার্টগুলা এত বড় ছিলো যে, প্যান্টের ভিতর সাইড দিয়ে গুজিয়ে, হাতা ফোল্ড করলেও সোল্ডারের দিকে তাকালে বুঝা যেতো। সেটা দেখে আমার রুম্মেট (উনাকে আমরা কাকু নামে ডাকতাম, অনেক কারণে) হাসাহাসি করতো। এমনকি আমার ক্লাসের ফ্রেন্ডরাও সেটা নিয়া হাসাহাসি করতো। অত্তো বড় শার্ট। তুই একদিন বড় হবিই !!! সাথে সাথে আমিও হাসতাম। হাসি দেওয়া ছাড়া আমার আর কিবা করার ছিলো????
সেই ভাইয়ার ফেলে যাওয়া স্যান্ডেল আর জামা পরে আমি এক্স নটরডেমিয়ান, থার্ড ইয়ার মেকানিক্যাল সেজে ফাস্ট টিউশনি করাইছিলাম। দুইটাই ভূয়া তথ্য। এমনকি টিকাতলির মোড়ে, নটরডেমের এক স্টুডেন্টকে, এক্স নটরডেমিয়ান হিসেবে পড়ায়ছিলাম কিছু দিন। কিন্তু মিথ্যা কথা বলা বা ইনফরমেশন হাইড করতে ভালু লাগে না (সাধু!!!)। তাই কয়দিন পর, ভালো টিউশনি পেয়ে, ঐ টিউশনিগুলা অন্যদের দিয়া দিছিলাম। কি করমু, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার বললে কেউ টিউশনি দেয় না। সবাই খুঁজে ইলেকট্রিকাল আর সিএসসি উইথ এক্স নটরডেমিয়ান। অন্যদের খাওয়া নাই।
লেভেল ৩, টার্ম ১ (থার্ড ইয়ারে) উঠার পর। আমাদের ফার্স্ট ক্লাস প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। দেখা গেলো আমার কোনো ফর্মাল শার্ট, প্যান্ট বা জুতা নাই। কলেজ ড্রেসের সেই শার্ট আর প্যান্টখানি, কবেই ছিড়েছিড়ে তেনাতুনা হয়ে গেছে। আর এইদিকে টিউশনির বেতনও পাই নাই। আর টিউশনির বেতন দিয়ে হালকা ফ্যামিলী সাপোর্ট দেয়াও লাগতো। শেষমেষ, বন্ধু শাওনের কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার করে, ঢাকা কলেজের উল্টা পাশ থেকে ১৫০ টাকা দামের, পলিস্টারের রেডিমেড প্যান্ট কিনে, শাওনের শার্ট, বন্ধু মোবারকের জুতা জোগাড় করতে পারলেও আমার পাতলি কোমড়ের বেল্ট ম্যানেজ করতে পারি নাই। তাই, প্রেজেন্টেশন দেবার সময় শার্ট, চারপাশ থেকে একটু বেশী নামায় দিছিলাম। কারণ, কোমরে যে বেল্ট নাই, সেই ব্যপারটা যাতে কেউ বুঝতে না পারে।