Just another Dude.
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ট্রান্সফার হওয়ার দুই মাস পর থেকেই চাকরির জন্য এপ্লাই করা শুরু করে দিছিলাম। কিন্তু ইন্টারভিউতে কেউ ডাকতো না। দুই দিন পরে Resume তে "Bachelor in Industrial & Production Engineering" কে চেইঞ্জ করে "Bachelor in Engineering" করে দিলাম। নিজের একটা ওয়েবসাইট (mmrkhan.webs.com) বানালাম। তাতেও কোন লাভ হলো না।
কম্পিউটার সায়েন্সের প্রচুর জব আছে। কিন্তু ছোট বা মাঝারী সাইজের কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনালদের স্পন্সর করতে চায় না। তাই রিক্রূটাররা আমাদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। এই সুযোগ নিয়ে ইন্ডিয়ান কনসালটেন্সি ফার্মগুলা অন্য কোম্পানির নাম দিয়ে পপুলার জব-সাইটে ফেইক জব পোস্ট করে। তারপর ইন্টারন্যাশনালদের স্পন্সরের লোভ দেখাইয়া, চার-পাঁচ বছরের ফেইক এক্সপেরিয়েন্স যোগ কইরা অন্য কোম্পানিতে নিজেদের এমপ্লয়ী হিসেবে কাজ করায় এবং স্যালারীর ২৫-৩০% কমিশন খায়। আমি ভাবলাম- ওরা দুই নাম্বারী করতে পারলে, আমি অন্তত একটা ইলিউশান তৈরি করতে পারি। আগের কাজ, নিজের স্টার্টআপের প্রজেক্ট-গুলারে ঘুরাইয়া পেঁচাইয়া, জোর কইরা কম্পিউটার সাইন্সের কাজ হিসেবে দেখালাম। বাংলাদেশ থেকে চার বছর জব করে আসা জুনায়েদ ভাইয়ের LinkedIn প্রোফাইল থেকে- "4 years experience in full software development life-cycle" কপি পেস্ট মেরে আমার প্রোফাইলের সামারিতে দিয়া দিছিলাম। সাথে সাথেই ইন্টারভিউ কল বেড়ে গেছিলো। আবার এমনও দেখা গেছে, একই কোম্পানি থেকে জুনায়েদ ভাই ইন্টারভিউ পায় নাই অথচ আমি পেয়ে গেছি।
হাফ-ঝাপ মেরে ইন্টারভিউ পাওয়া গেলেও, চাকরি পাওয়া অত্ত সোজা না। trip Advisor এ এক ঘন্টার ফোন ইন্টারভিউ ছিলো। কয়েকবার চেষ্টা করেও প্রথম প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারি নাই। তাই পাঁচ মিনিট পরে- "I think we should stop here." বলে ফোন রেখে দিছিলো। লজ্জায় আর অসহায়ত্বে, বাসা থেকে বের হয়ে ইউনিভার্সিটি ভিলেজের পার্কিং লটে বসে বসে ঠিক করছিলাম- "এক্সপেরিয়েন্সের ইলিউশান ধরে রেখে, বার বার লজ্জায় পড়লে, স্বল্প সময়ে বেশি পরিশ্রম করার ক্ষিপ্ততা আসবে"। তাই যতবার এক ঘন্টার ইন্টারভিউ পাঁচ-দশ মিনিটে শেষ হইছিলো, ততবার নব্য উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। তবে সবচেয়ে কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিলো, Douglas Scientific এর অফিসে। দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত পাঁচ রাউন্ড ইন্টারভিউ হওয়ার কথা ছিলো। প্রথমেই একটা ল্যাপটপে দুইটা সহজ প্রবলেম সলভ করতে এক ঘন্টা সময় দিয়ে বললো- চাইলে ইন্টারনেটও ব্যবহার করতে পারবে। কত্ত রকমে যে গুগল করছিলাম, আল্লাহ মালুম। তারপরেও একটা প্রবলেমও সলভ করতে পারি নাই। তাই পাঁচ রাউন্ড দূরে থাক, এক রাউন্ড শেষেই বলে দিছিলো- "বাপু বাড়ি যাও!"। এতটাই মন খারাপ হইছিলো যে, হাইওয়ের মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে, বিস্তীর্ণ মাঠের ওপারের খোলা আকাশের দিকে অশ্রুভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।
ইন্টারভিউতে যেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম না, সেগুলার উত্তর মাইনসের পিছে ঘুরে ঘুরে, গুগলে সার্চ মেরে খুঁজে বের করতাম। ড্রপবক্সে Interview materials নামে একটা ফোল্ডারে সবকিছু রাখতাম। প্রোগ্রামিং এর অনেক কিছু আমার রুমের দেয়ালে ঝুলায় রাখতাম। একটা সাদা বোর্ড ছিলো, তাতে লিখে রাখতাম। কমন পড়লে, দেখে দেখে বলে দিতাম। আর নিজের কাছে জাস্টিফাই করার জন্য ভাবতাম- চাকরি পাইলে নিশ্চয়ই গুগল করে এনসার বের করে প্রোগ্রামিং করতে দিবে। তারপরেও ইন্টারভিউর পাঁচ-দশ মিনিট গেলেই ওরা বুঝে ফেলতো আমার প্রোগ্রামিং এর কনসেপ্ট ক্লিয়ার না। ২০১১ সালের মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাইক্রোসফটে তিনবার, এমাজনে দুই বার, ইয়াহুতে দুইবার, LinkedIn এ একবার, ছোট খাটো খুচরা-খাচরা, আন্ডা-বাচ্চা শত শত কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিছিলাম। একটা ইন্টার্ন পাওয়া ছাড়া আর কোন সাকসেস ছিলো না।
কয়দিন পরে বুঝলাম ছোট বা মাঝারি কোম্পানির অলিখিত সিস্টেম হচ্ছে- অন্য শহর থেকে ক্যান্ডিডেট ইন্টারভিউর জন্য ফ্লাই করে আনবে না। তাই কোম্পানি যে শহরে, তার আশেপাশের ভার্সিটির ক্যারিয়ার সেন্টারে জব পোস্ট করে। ফারগো ছোট শহর বলে, নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যারিয়ার সেন্টারে জব কম আর বড় শহরের ভার্সিটিতে অথবা বড় বড় ভার্সিটিতে জব বেশি। এইটার জন্য আরেকটা বুদ্ধি বের করলাম। আমার যেসব ফ্রেন্ড কম্পিউটার সায়েন্সের না কিন্তু বড় ভার্সিটিতে বা বড় শহরের কোন ভার্সিটিতে পড়ে তাদের ক্যারিয়ার সেন্টারের ইউজার আইডি আর পাসওয়ার্ড নিয়ে, তাদের ভার্সিটির ক্যারিয়ার সেন্টারে যেসব কোম্পানি জব পোস্ট করছে, সেইসব কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে ডাইরেক্ট এপ্লাই করতাম। এই সিস্টেমে ইন্টারভিউ পাওয়ার হার অনেক বেশি। ইনফ্যাক্ট আমার প্রথম চাকরি, স্ট্রাটা ডিসিশন টেকনোলজি এর খোজ এইভাবেই পাইছিলাম। ইন্টারভিউ দেয়ার আগে glassdoor বা careercup এ ওই কোম্পানির ইন্টারভিউর প্রশ্ন সবসময় দেখে যেতাম। শিকাগোতে অন-সাইট ইন্টারভিউতে গিয়ে দেখি glassdoor এর প্রশ্ন কমন পড়ে গেছে।
২০১১ এর ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে স্ট্রাটা ডিসিশন টেকনোলজিতে জব পেয়ে যাই। জব পাওয়ার পরে প্রফেশনাল লেভেলে প্রোগ্রামিং করতে কি কি স্ট্রাগল করা লাগছিলো সেটা আরেকদিন বলবো।
Popular Interview Coding problems
Cracking Coding Interview book