Marathon of hope

গুরু নাম্বার - ৭

See other Gurus

লাইফের ঝামেলা ::

লাইফে যত ঝামেলাই থাকুক না কোনো, ১৮ বছর বয়সে, কোমর থেকে ডান পা কেটে ফেলে দেয়ার চাইতেও বড় ঝামেলা, খুব কম মানুষের জীবনেই আসে। তবে পা কেটে ফেলে দেয়াটাও তুচ্ছ একটা ব্যাপার মনে হয়- যখন কাউকে জানানো হয়, তার শরীরে বাধা বেধেছে- মরণব্যাধি ক্যান্সার।

অল স্টার হুইল চেয়ার ::

শরীরের ভিতরের গোপন বন্ধু ক্যান্সার আর বাইরের নতুন বন্ধু কৃত্রিম পা সঙ্গে নিয়ে অল্প কয়েকদিনেই হাটা রপ্ত করে ফেলে সে। বসে বসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন না করে, যোগ দেয় 'হুইল চেয়ার বাস্কেটবল টিমে'। শুধুমাত্র মনের জোরে, সারাদিন হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে, হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে বাস্কেটবল প্রাকটিস করে সে। আর রুটিন করে ফিরে যায় হাসপাতালে- ক্যান্সারের কেমোথেরাপি নিতে। ষোল মাস ধরে কেমোথেরাপিও আটকে রাখতে পারেনি তাকে। তিনবার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয় সে। একবার নির্বাচিত হয়- অল স্টার হুইল চেয়ার বাস্কেটবল প্লেয়ার।

নাছোরবান্ধা পরিশ্রম::

ক্যান্সারের কাছে হার না মানা ছেলেটা ঠিক করলো সে দৌড়ানোর চেষ্টা করবে। এটা ১৯৭৮ সালের কথা। তখন কৃত্রিম পা, আজকের মতো উন্নত লেভেলের ছিলো না। তাই ছেলেটার স্বপ্ন অর্জনের পথে কৃত্রিম পা বাধা হয়ে দাড়ায়। দৌড় দেয়ার জন্য লাফ দিয়ে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে, কৃত্রিম পা কোমর থেকে নড়ে যায়। পাঁচ-দশ মিনিট দৌড়ালে, কোমরের সাথে কৃত্রিম পায়ের ঘষা লেগে ব্যথা হয়, ফোস্কা পড়ে, চামড়ায় কালো দাগ হয়। তবে নাছোরবান্ধা ছেলেটা, সহজে হার মানবে না।

ট্রায়াল এন্ড এরর করতে করতে সিস্টেম বের করলো - কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে প্রথমে ভালো পা সামনের দিকে নিবে, তারপর ভালো পায়ের উপর ভর করে হালকা একটু লাফ দিবে। একই সময়ে কৃত্রিম পা কোমরের সাথে সোজাসুজি পজিশনে নিয়ে আসবে। তবে সমস্যা হচ্ছে- একজন স্বাভাবিক মানুষ এক কদম দৌড় দিয়ে যতটুকু যেতে পারে, ততটুকু দুরুত্ব যেতে তাকে দুইবার কদম ফেলতে হবে এবং একটা লাফ দিতে হবে। এক্সট্রা কদম, এক্সট্রা লাফ, এক্সট্রা পরিশ্রম ছেলেটির জন্য কোনো সমস্যা না। তাই সাধনা চলতে লাগলো।

এক মাথা থেকে আরেক মাথা::

চৌদ্দ মাস প্রাকটিস করে, ছেলেটি গেলো, ২৬ মাইলের ম্যারাথন দৌড় (৪২.২ কিলোমিটার) দিতে। সেখানে সর্বশেষ প্রতিযোগীর চাইতেও ১০ মিনিট বেশি সময় নিয়ে, ম্যারাথন শেষ করতে পেরেছিলো সে। ম্যারাথন শেষ করেই তার আসল পরিকল্পনা জানায় ফ্যামিলিকে- প্রতিদিন একটা করে ম্যারাথন দৌড় দিয়ে, কানাডার এক প্রান্ত থেকে শুরু করে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত দৌড় দিয়ে পাড়ি দিতে চায় সে। কানাডা ছোট খাটো দেশ না। কোন গ্যাপ না দিয়ে প্রতিদিন দৌড়ালে, টানা ২২১ দিন ম্যারাথন দৌড় দেয়া লাগবে, কানাডার এক মাথা থেকে আরেক মাথায় (৫৭৮০ মাইল) যেতে। ফ্যামিলি কোনভাবেই রাজি হচ্ছিলো। ডাক্তারের কাছে ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য গিয়েও হতাশ হতে হয়। তবুও ড্রিম অর্জনের জন্য ছেলেটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ডেডিকেশন ফর ড্রিম ::

১২ এপ্রিল, ১৯৮০ সালে দৌড় শুরু করে সে। প্রতিদিন ভোর ৪ টার সময় ঘুম থেকে উঠে ১২ মাইল দৌড় দেয়। তারপর বিকেলে আরো ১৪ মাইল। এই একই নিয়মে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস দৌড়াতে লাগলো সে। ঝড়, বৃষ্টি-বাদল, তুষারপাত, জোর করে রাস্তা থেকে নামিয়ে দিতে ড্রাইভারদের গালিগালাজ, কোনো কিছুই থামাতে পারেনি তাকে। এমনকি নিজের জন্মদিনেও দৌড় বন্ধ করে রেস্ট নিতে রাজি হয়নি সে। আর আমরা ফাঁকিবাজি করার এক হাজার একটা ছুতা খুঁজি। দুই একদিন চেষ্টা করেই হাঁপিয়ে উঠি। হালকা বৃষ্টি, একটু সর্দি কাশি হলেই, ঝিম মেরে বসে থাকি।

এক্সট্রা

কৃত্রিম পা, ক্যান্সার, বৈরী আবহাওয়া, কোনো কিছুই থামাতে পারেনি তাকে। দৌড় চলতেই থাকে। এভাবে টানা ১৪৩ দিন ম্যারাথন দৌড় দেয়ার পরে কফ, বুকের ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করলে, হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয় সে। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই জানা যায়, তার দুইটা ফুসফুসেই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে। ৩,৩৩৯ মাইল (৫,৩৭৩ কিলোমিটার) দৌড় দেয়ার পরে থামাতে হয়েছে 'ম্যারাথন অফ হোপ'। তবে সেদিন ম্যারাথন থামলেও টেরি ফক্স এর হোপ আজও থামেনি।


FB post