ceaseless efforts

গুরু নাম্বার - ৪

See other Gurus

পারফেক্ট শিশু::

দুই হাতে দশটি আঙ্গুলের পরিবর্তে দুটো করে চারটি আঙ্গুল নিয়ে জন্মালে, হালকা একটু মন খারাপ হতে পারে বাবা- মার। কিন্তু জম্নের সময় ওর হাঁটুর নিচের অংশ পার্সেল হয়নি। ব্রেইন ঠিক মতো কাজ করবে না। ডাক্তার বলে দিছে, বাসায় নিয়ে যেতে পারেন কিন্তু বেশি দিন টিকবে না। ঝামেলা এড়াতে, আত্মীয় স্বজনরা, এতিমখানায় দিয়ে দিতে চাচ্ছে। তারপরেও মায়ের কাছে সন্তানরা সবসময়ই পারফেক্ট। শিশুটিকে বাসায় নিয়ে আসলেন তার মা।

বাকি থাকলো মা::

কিছুদিন পরে দেখা গেলো, দুই হাতে মোট চারটি আঙ্গুল থাকলেও ভিত্রে কোন হাড্ডি নাই। আমরা কলম বা চামচ ধরি আঙ্গুলের হাড় দিয়ে প্রেসার দিয়ে। কিন্তু যার আঙ্গুলে হাড় নাই, সে কি করবে? ডাক্তার চিন্তা করলেন, যদি ওই আঙ্গুল দিয়ে কোন কিছুতে চাপ দিতে পারে, তাইলে হয়তো শক্তি পেতে পারে। অপশন হিসেবে বল্লেন, পিয়ানো বাজানোর ট্রাই করে দেখতে। তাতে যদি আঙ্গুলের মাংস পেশীতে কিছু শক্তি আসে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস চেষ্টা করেও পিয়ানোর কি প্রেস করতে পারতেছিলেন না ওই আঙ্গুল দিয়ে। একজন পিয়ানোর শিক্ষক রাখা হইছিল, এতসব ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ দেখে, দুই দিন পর ওই শিক্ষক পালাইছে। বাকি থাকলো মা। তিনিই নিলেন পিয়ানো শিখানোর কাজ।

ধুরু ধুরু বুকে::

আঙ্গুলে হাড় না থাকায়, সেগুলা লম্বা বা বাঁকা করতে পারতেন না। তার হাতের শক্তি আঙ্গুলে পৌঁছতো না। তাই আঙ্গুল সোজা রেখে, হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিয়ানোর কি এর উপর প্রেসার দেয়া শুরু করলেন। তার উপ্রে আরেকটা বড় প্রবলেম ছিলো ব্রেইন কাজ করতো না। কোন লিরিক বা লাইন মনে রাখতে পারতেন না। ডাক্তার সতর্ক করে দিছিলেন, যদি কোন একটা গানের অংশ, পাঁচ মিনিটের বেশি মনে রাখার চেষ্টা করেন, তাইলে ব্রেইনের উপর আরও চাপ পড়বে এবং আস্তে আস্তে ব্রেইন আরও অকেজো হয়ে যেতে পারে। কিন্তু মা, ধুরু ধুরু বুকে, ধীরে ধীরে, একটু একটু করে আগাতে থাকলেন। কারণ ছেড়ে দেয়ার পাব্লিক উনি না।

যত মুশকিল তত আসান::

মাসের পর মাস সাধনা করতে করতে, একদিন ঠিকই পিয়ানোর কি তে প্রেস করতে পারলেন। তারপর আসলো, চার আঙ্গুল দিয়ে এক সুর থেকে অন্য আরেক অংশের সুরের সাথে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারার চ্যালেঞ্জ। সেটারও চেষ্টা চল্লো দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। মাসের পর মাস। বছরের বছর সাধনা করে একটা অংশ তৈরি করতে পারলেন। শেষমেশ আসলো, পিয়ানোর প্যাডেলে পা দিয়ে প্রেস করার সমস্যা। তার তো উচ্চতা তিন-ফুট চার ইঞ্চি, পা দিয়ে নাগাল পাওয়ার কোনো কারণ নাই। পরে হিঞ্জ দিয়ে একটা সিস্টেম তৈরি করা হলো। যত মুশকিল তত আসান। এইভাবে মা আর মেয়ের সংগ্রাম চলতে চলতে, কয়েক বছর পর একটা গান তুলতে পেরেছিলেন। মাত্র একটা গান তুলার জন্য আমাকে-আপনাকে ওদের চেষ্টার এক লাখ ভাগের এক ভাগও দেয়া লাগবে না। অথচ দশ দশটি আঙ্গুল, ডাঙ্গর ডাঙ্গর পা, পুরা ফাংশনাল ব্রেইন নিয়ে হা করে তাকায় থাকি। সিরিয়াসনেস ৫ মিনিটের বেশী ধরে রাখতে পারি না। ঠেলতে ঠেলতে, বকতে বকতেও আমাদের দিয়ে একটু কাজ করাইতে পারে না। সো, আমাদের কাছ থেকে কোনকিছু আশা করা পাপ।

সত্যিকারের যোগ্যতা ::

কোন রকমে একটা গান তৈরি করার পর। প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছে হলো। বাদ সাধলেন আয়োজকরা, শারীরিক কন্ডিশন দেখে। একের পর এক রিজেকশন খাইলেও, ওরাতো ছেড়ে দেবার পাত্র না। চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। শেষমেশ, এক প্রতিযোগিতায়, অনেক কষ্টে, চান্স পাওয়া গেলো। মেয়ে পারফর্ম করলেন, শারীরিক অবস্থা প্রকাশ না করেই। এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে, চার আঙ্গুলের এক প্রতিযোগী পুরস্কার জিতে নেয়। কোন করুণা বা মায়া দিয়ে নয়, সত্যিকারের যোগ্যতা দিয়ে।

কসম আপনার::

এতক্ষণ যার কথা বলতেছিলাম তার নাম Lee Hee-Ah আর উনি একটা পুরস্কার জিতে খুশীতে আটখান হয়ে ঐখানে থেমে থাকেন নি। এলবাম বের করেছেন। দেশে বিদেশে ঘুরে ফিরে ২৫০ টির ও বেশি কনসার্টও করেছেন। এরাম লেভেলের সাধনা করার পর আসে সফলতা। প্রতিকূলতার কাছে যারা হারতে জানে না, তাদের জন্য সফলতা ছাড়া আর কিছু থাকে না। ওদের ceaseless efforts এর, এক হাজার ভাগের এক ভাগও যদি আপনি দিতে পারেন, আপনারে কেউ ঠেকাতে পারবে না। কসম আপনার।

Lee Hee-Ah এর জীবনীর ভিডিও

এক হাতে কোন আঙ্গুল নাই, তাই হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পিয়ানো বাজায়

one leg dancer


FB post