Dream is to achieve not to dream
ইন্টারভিউতে সবচেয়ে কমন এবং প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, "টেল মি এবাউট ইউরসেল্ফ"
এইটা একটা ওপেন কোশ্চেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে, তালগোল পাকিয়ে, যা খুশি বলতে পারেন। যেমন, "আমি কামব্রিয়ান কলেজ থেকে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে ২০০৯ সালে নর্থ সাউথ উনিভার্সিটিতে বিবিএ তে ভর্তি হই। বিবিএ শেষ করে ভালো একটা জব খুজতেছি। তার আগে নর্থ সাউথে থাকার সময় আমি প্রাইম ব্যাঙ্কে ইন্টার্ন করেছি। স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় একটা কল সেন্টারে পার্ট টাইম কাজ করেছি। এছাড়াও আমাদের অনেক ক্লাস প্রজেক্টে কাজ ছিলো। কয়েকটা ক্লাস প্রজেক্টে, আমি প্রজেক্ট লিডারও ছিলাম। ফ্যামিলির সাথে ধানমন্ডিতে থাকি আর ট্রাভেল করতে খুবই পছন্দ করি।"
খুবই ইনোসেন্ট আর বাস্তবিক হইলেও পুরাই ফকিরা মার্কা একটা এনসার। কারণ ঐ ব্যাটা, এড মিহ করার জন্য এই প্রশ্ন করে নাই। বরং সে যেটা শুনতে চাইসে, সেটা হচ্ছে, আপনার কি কি স্কিল, এক্সপেরিয়েন্স বা ইন্টারেস্ট আছে, যেগুলা দিয়ে আপনি এই জবের কাজগুলা উল্টায় ফেলতে পারবেন। তাইলে সে বুঝতে পারবে অন্যদের চাইতে আপনি কতটুকু আগায় আছেন। আপনি কই থাকেন, ফুচকা, ফালুদা না ফ্রুটিকা গিলেন, সেটা জেনে ওই ব্যাটার কোন লাভ নাই। এছাড়াও কল সেন্টার, ক্লাস প্রজেক্ট এমনকি প্রাইম ব্যাঙ্কের ইন্টার্ন, সেগুলাতে যাওয়া আসা কইরা খালি চেহারা দেখাইয়া বেতন তুলছেন নাকি এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করে দেখাইছেন। তাও কিন্তু বলেন নাই। আপনি যদি বাজারে তরমুজ কিনতে চান। সবগুলা থেকে, আপনার বাজেট অনুযায়ী সবচেয়ে ভালোটা কিনবেন। চাকরির জন্য প্রার্থী বাছাইও একই রকম। বেস্ট ক্যান্ডিডেট কেই হায়ার করবে ওরা ।
তাই স্মার্টলি আকাজের বক বক না করে, ইফেক্টিভ উত্তর দিতে হইলে কয়েকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে -
১. উত্তর হইতে হবে দেড় বা সর্বোচ্চ দুই মিনিটের। ছাগল বা মহিষের রচনা শুনার টাইম বা ইন্টারেস্ট ওদের নাই।
২. এইটার উত্তর অবশ্যই আগে থেকে ঠিক করে, কমপক্ষে ১০ বার প্রাকটিস করে আসতে হবে
৩. আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটা বা তিনটা এচিভমেন্ট চিন্তা করে করে বের করতে হবে। এই এচিভমেন্ট গুলো অবশ্যই যেই জবের ইন্টারভিউ দিতে আসছেন সেটার সাথে রিলেটেড হইতে হবে। হতে পারে টেকনিক্যাল এচিভমেন্ট বা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট বা লিডারশীপ রিলেটেড। আর ডাইরেক্টলি রিলেটেড না থাকলেও ঘুরায় প্যাঁচায়, ভাজ মেরে রিলেটেড বানাতে হবে। কারণ কোন একটা স্কিল বা অর্জন বা কোয়ালিটির কথা বললেন, যেটা শুনে, যে ইন্টারভিউ নিচ্ছে, সে যাতে ওই স্কিলটা, তার কোম্পানিতে কাজে লাগবে মনে করে। সে সেটা মনে না করলে, ওই স্কিলের কথা বলে লাভ নাই।
৪. রেসপন্সিবিলিটি নিয়ে কথা না বলে এচিভমেন্ট নিয়ে কথা বলুন। রেসপন্সিবিলিটিকে কখনো হাইলাইট করবেন না। যেমন, আমি ক্লাস প্রজেক্টের লিডার ছিলাম বলার দর্কার নাই। বরং লিডার, এমনকি গ্রুপ মেম্বার হয়ে আপনি কি ছিড়ে উল্টায় ফালাইছেন সেটা নিয়ে কথা বলেন। আর ঐটা মেজারেবল হইলে খুবই ভালো হয়।
৫. আপনি কোন ভার্সিটি বা কোন সাবজেক্টে পড়াশুনা করছেন সেটা বলার দরকার নাই। সেটা ওরা জানে, আপনার সিভি দেখে।
৬. যদিও মুখস্ত করা থেকে উত্তর দিবেন, তারপরেও উত্তর দেয়ার সময় হালকা আমতা আমতা করবেন। এমন একটা ভাব যে, আপনি এখন চিন্তা করে বলতেছেন। খুব বেশি আমতা করতে যাবেন না তাইলে চাইলে-ডাইলে খিচুড়ি বানায় ফেলার চান্স আছে।
আগের উত্তর মোটামুটি এই রকম হতে পারে - "ব্যাঙ্কের বিজনেস এবং কাস্টমার সার্ভিস আমার কাছে খুবই ইন্টারেষ্টিং এবং চ্যালেন্জিং লাগে। তাই প্রাইম ব্যাঙ্কের বাড্ডা ব্রাঞ্চে ইন্টার্ন করার সময়, তাদের কাস্টমার সার্ভিসে কয়েকটা পরিবর্তন এনে এভারেজ সার্ভিস টাইম ১০% কমায় ফেলছি। আর স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায়, আমি তিন বছর মোবাইল কোম্পানির কল সেন্টারে পার্ট টাইম কাজ করে, বিভিন্ন লেভেলের কাস্টমার হ্যান্ডেল করার স্কিল অর্জন করি। এছাড়াও আমার রেসপনসিবিলিটির বাইরে আমি, কল সেন্টারের সফটওয়ারের কিছু ইমপ্রুভমেন্ট সাজেস্ট করি। সেটা ইম্পিলেম্ন্ট করার পর কল-ড্রপ ২৩% কমে যায় এবং এভারেজ ওয়েটিং টাইম ২ মিনিটের নীচে চলে আসে। আপনি চাইলে আমি এইটা বা প্রাইম ব্যাঙ্কের ইন্টার্ন নিয়ে ডিটেল বলতে পারি"
দ্যাখেন, এই উত্তরটাতে কয়েকটা চমৎকার জিনিস, যেমন এচিভমেন্ট, সেটাও মেজারেবল। কোয়ান্টিফাই করা যাবে। এবং বুঝাই দিছে যে, সে কাস্টমার হ্যান্ডেল করতে ওস্তাদ এবং সেটা একটা চাল্লেঞ্জ হিসেবে নিছে। তার নিজস্ব কাজের রেস্পন্সিভিলিটির বাইরে গিয়েও অফিসের প্রসেস ইমপ্রুভ করতে সদা জাগ্রত (আজাইরা ভাবস)। যে লোক ইন্টারভিউ নিচ্ছে, সে এই উত্তর শুনার পর, এই ছোকরার বিষয়ে পজিটিভ ধারণা হয়ে যাবে। এবং চাইলে সে আরো ডিটেল জানতে চাইতে পারে। আচ্ছা, প্রাইম ব্যাঙ্কে তুমি কি কি পরিবর্তন করছিলা। কেনো করছিলা। ম্যানেজমেন্টকে সেগুলা কিভাবে প্রেজেন্ট করছিলা, কিভাবে রাজি করায়ছিলা। ওদের কি কি কনসার্ন ছিলো। আরোও বেশি করতে দিলে তুমি কি করতা। ব্যাঙ্কের অন্য ইম্প্লয়ীরা এই পরিবর্তনগুলারে কিভাবে নিছে (চেইঞ্জ ম্যানেজমেন্ট), ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐগুলার উত্তর যাতে ভালোয় ভালোয় দিতে পারেন, সেই হোম ওয়ার্ক মাস্ট করে যাবেন।
btw, এচিভমেন্ট না থাকলে, একটিভিট (মেজারেবল আউটপুট বাদ দিয়ে), ইন্টারেস্ট, প্যাশন, অন্যান্য স্কিল লাইক প্রবলেম সলভার, কুইক লার্নার, ওয়ার্কিং আন্ডার প্রেসার। এই রকম গুলা দশেক বাজ ওয়ার্ড থেকে ৪-৫ টা মেরে দিলেই খুশিতে গদগদ করবে।
চাকরির ইন্টারভিউ পাচ্ছেন না। চিন্তা করার কোন কারণ নাই। কারো সাথে লাইন মারতে গেলেও, টেল মি এবাউট ইউরসেল্ফ স্টাইলে প্রিপারেশন নিতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার উত্তর জব ডেসক্রিপশনের সাথে অর্থাৎ ফিউচার গার্ল ফ্রেন্ডের ড্রিম বয়ের সাথে মিলতে হবে। উদাহরণ হিসেবে, আমি দই-বড়া খাইতে, সারা রাত জাগতে, ২৪ ঘন্টা ফোনে কথা বলতে, বৃষ্টির দিনে রিক্সার হুড তুলে দিয়ে ঘুরতে, অন্য মেয়েদের প্রোফাইল চেক না করতে, খুবই পছন্দ করি। তবে, সাবধান, এই বিশেষ ক্ষেত্রে, আপনার স্কিল বা অভিজ্ঞতা থাকলে, চেপে গিয়ে সুর করে বলেন, "জানটু, মানটু, ফানটু, ইউ আর মাই ফার্স্ট লাভ, টু টু"
ইন্টারভিউ প্রশ্নের উত্তর -১